Monday, September 27, 2010

মওলা বখ্শ মেমোরিয়াল ট্রাস্ট

0 comments
মওলা বখ্শ সরদার মেমোরিয়াল ট্রাস্ট পুরান ঢাকা তথা ঢাকার একটি অন্যতম সমাজসেবামূলক সংগঠন। পুরান ঢাকার ফরাশগঞ্জের ২৪, মৌহিনী মোহন দাস লেনস্থ মওলা বখ্শ সরদার মেমোরিয়াল ট্রাস্টটি ১৯৮৮ সালের ১৫ জানুয়ারি মওলা বখ্শ সরদারের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য স্থাপন করা হয়। মওলা বখ্শ ছিলেন ঢাকার গৌরবময় একজন একনিষ্ঠ সরদার এবং নিবেদিতপ্রাণ সমাজকর্মী। দুস্থ মানুষের প্রতি তার মমত্ববোধ ছিল প্রগাঢ়। ১৯৮৭ সালের ১৫ জানুয়ারি এ মহান সমাজকর্মীর মৃত্যুর পর তার বড় ছেলে আজিম বখ্শ এবং পরিবারের সদস্যরা তার নামে একটি ট্রাস্ট স্থাপনের চিন্তা-ভাবনা করেন। পরবর্তীতে ১৯৮৮ সালের ১৫ জানুয়ারি মওলা বখ্শ সরদারের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে এ ট্রাস্টের যাত্রা শুরু হয়। ২৪, মৌহিনী মোহন দাস লেনের বাড়িটির ১৬ কাঠা জমির ওপর একসময় জমিদারদের রংমহল ছিল, যা পরবর্তীতে মওলা বখ্শ কিনে নেন এবং সেখানে দোতলা বাড়িটি নির্মাণ করেন। তার মৃত্যুর পর পুত্র আজিম বখ্শ এ বাড়িটি সাধারণ মানুষের কল্যাণে উৎসর্গ করেন। নিজের এবং পরিবারের অর্জিত সমুদয় অর্থ থেকে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন মওলা বখ্শ সরদার মেমোরিয়াল ট্রাস্ট। 'দাও আলো, দাও জীবন' স্লোগানের মাধ্যমে শুরু হয় ট্রাস্টটির কার্যক্রম। পরবর্তীতে ১৯৯০ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রাস্টটির উদ্বোধন করেন। মওলা বখ্শ সরদার মেমোরিয়াল ট্রাস্টের কার্যক্রমের যাত্রা শুরু হয় মওলা বখ্শ চক্ষু হাসপাতালের মাধ্যমে। এ হাসপাতালে ২টি ওয়ার্ড, ৫টি কেবিন ও ২০টি বেড রয়েছে। হাসপাতালটি শনি-বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত খোলা থাকে। মওলা বখ্শ হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন প্রায় ১৬০ জন রোগী চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। এখানে মাত্র ১০ টাকার টিকিটের বিনিময়ে রোগীদের চক্ষু বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। এছাড়াও মওলা বখ্শ সরদার মেমোরিয়াল ট্রাস্টের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক প্রকল্পে ১৯৯৭ সাল থেকে যুক্ত হয় ঢাকা কেন্দ্র। এখানে রয়েছে ঢাকার অন্যতম ইতিহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষণের পাঠাগার, প্রদর্শনী, গবেষণা, প্রকাশনা ও চর্চা কেন্দ্র। রয়েছে ৪০ আসনবিশিষ্ট একটি লাইব্রেরি। লাইব্রেরিটির ৬ হাজার ৫০০ বইয়ের মধ্যে ৩ হাজার ৫০০ বই-ই ঢাকাবিষয়ক। ঢাকাবিষয়ক যেকোনো গবেষণার কাজে গবেষক, সাংবাদিক ও ইতিহাসবিদদের জন্য ঢাকা কেন্দ্রের দ্বার সব সময় উন্মুক্ত। ঢাকা কেন্দ্রের দক্ষিণ অংশজুড়ে রয়েছে ঢাকা প্রদর্শনী কেন্দ্র। ২০০৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর নাট্যকার সাঈদ আহম্মেদ এটি উদ্বোধন করেন। এখানে রয়েছে ৩০ দশকের বিয়ের পোশাক, ৪০ দশকের বিদ্যুৎচালিত কলের গান, পাকিস্তান আমলের হুক্কা, রেকর্ড, টেলিফোন, চাল গুঁড়া করার কাহেল, ট্রাঙ্ক, দেয়াল ঘড়ি, ঢাকার বিভিন্ন ঐতিহাসিক আলোকচিত্রসহ আরো অনেক কিছু। ঢাকা কেন্দ্রের উত্তর পাশে রয়েছে ১০০ আসনবিশিষ্ট অডিটোরিয়াম বিলকিস বানু স্মৃতি মিলনায়তনে। এখানে ঢাকাবিষয়ক প্রামাণ্যচিত্র, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রসহ বিভিন্ন ফুটেজ প্রদর্শনী করা হয়। এছাড়াও ঢাকা কেন্দ্র থেকে তিন মাস পরপর ঢাকাবিষয়ক ম্যাগাজিন 'ত্রৈমাসিক ঢাকা' প্রকাশিত হয়। ঢাকা কেন্দ্রে আরো রয়েছে বিভিন্ন দুর্লভ প্রজাতির উদ্ভিদের নার্সারি। এ নার্সারিতে রয়েছে_ বিভিন্ন ধরনের ক্যাকটাস, ঘনঝাড়, বাদাম, রাবার, ঝাউ, বনসাই, মনিরাজ, ক্যারো ক্যাকটাসসহ বিভিন্ন প্রজাতির দুর্লভ গাছ। সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষ ও প্রাচীন ঢাকার উন্নয়নে মওলা বখ্শ সরদার মেমোরিয়াল ট্রাস্টের এক অনবদ্য অবদান রয়েছে। ঢাকাবাসীর জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন, ঢাকা সম্পর্কে ঢাকাবাসীকে সচেতন করে তোলা, ঢাকাবিষয়ক গবেষণা, আলোচনা, ঢাকার বিলুপ্তপ্রায় ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ এবং সাধারণ দুস্থ মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসাই মওলা বখ্শ সরদার ট্রাস্ট ও ঢাকা কেন্দ্রের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

-প্রীতম সাহা সুদীপ

0 comments:

Post a Comment