Thursday, September 30, 2010

বাউফল

0 comments
বাউফল উপজেলার ঐতিহাসিক পুরার্কীতিগুলো এখন প্রায় ধ্বংসের পথে। এখানকার উল্লেখযোগ্য কীর্তিগুলো হচ্ছে : চন্দ্র দ্বীপ রাজ্যের রাজধানী কচুয়া, কমলা রানীর দীঘি, ঘষেটি বিবির মসজিদ, তমিরুদ্দিন আউলিয়ার মাজার, কালিশুরীতে সৈয়দ আরেফিনের মাজার ও আদি যুগের মেলা, মদনপুরা গ্রামের ঢোল সমুদ্র দীঘি, কাছিপাড়া কানাই বলাই পুকুর, বগাতে ভারতবর্ষের সুপ্রাচীন চালের গোলা এবং বিলবিলাসে শেরেবাংলার পূর্ব পুরুষের মাজার। এসব কীর্তি যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ, সংস্কার এবং সংরক্ষণের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মহলের উদ্যোগ নেই, এমনকি নামফলকও দেওয়া হয়নি। এরই মধ্যে কোনো কোনো স্থানের স্থাপত্য নিদর্শনের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে। দু'চারটি যা আছে তাও বিলুপ্তের পথে।


রাজা যশো রাজপাল মায়ের আদেশে বিশাল আকৃতির দীঘি খননের কাজ শুরু করেন। মায়ের আদেশ ছিল দীঘির তলদেশ হতে ঢোলের শব্দ শোনা মাত্র দীঘি খননের কাজ বন্ধ করতে হবে। যখন ঢোলের শব্দ শোনা গেছে তখন দীঘির খনন কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বিশালাকায় অর্থাৎ সমুদ্রের মতো দীঘি নামকরণ হয়েছে ঢোল সমুদ্র দীঘি। দীঘির চিহ্ন এখনো বিদ্যমান।


বিলবিলাসের কাজিবাড়ি ছিল শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের পূর্ব পুরুষের বাড়ি। আঠারো শতকের দিকে ভগলপুর থেকে শেরবাংলার পূর্বপুরুষ বিচারকের চাকরি নিয়ে বিলবিলাস গ্রামে আসেন। শেরেবাংলার দাদা কাজি আকরাম ১৮২০ সালে বিলবিলাস গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।


কমলারানীর দীঘি থেকে আধা কিলোমিটার দক্ষিণে রাস্তার পাশেই সুউচ্চ বটবৃক্ষের নিচে মাজারটি। দেড় থেকে দুইশ বছর আগে যশোর হতে পাগল বেশে ওই ব্যক্তির এলাকায় আগমন ঘটে। ওই ব্যক্তিকে নিয়ে বহু অলোকিক ঘটনা, কল্পকাহিনী এলাকার প্রবীণদের মুখে মুখে ছড়িয়ে আছে। মাজারে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে বহু নারী-পুরুষ মানত নিয়ে আসে। জানা গেছে, প্রতিবছর চৈত্র মাসে মাজারের পাশে হয়। মাজারে পাশে বসবাস করছেন লালবরু বেগম জানান, তমির উদ্দিন আউলিয়া মারা গেছে ঠিকই কিন্তু এলাকার অনেকেই বিভিন্ন জায়গায় দেখতে পান। আবার চোখের পলকের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে যান। এলাকার নিবাসী নয়া মিয়া জানান, আমরা তমির উদ্দিন আউলিয়ার সম্পর্কে দাদা-দাদির কাছে অলৌকিক কাহিনী শুনে আসছি। কিন্তু মাজারটি রক্ষণাবেক্ষণ করার ব্যবস্থা নেই। মাজার ঘরটি পুরনো হয়ে গেছে। মাজারের পাশে স্তম্ভটি লেখা নেই।


বৃহত্তর বরিশাল, ফরিদপুর ও খুলনা জেলার অংশ বিশেষ নিয়েছিল চন্দ্র দ্বীপ রাজ্য। চতুর্দশ শতকে চন্দ্রদ্বীপ ছিল বাকলা নামে পরিচিত। আর বাকলার রাজধানী বাউফলের কালাইয়া বন্দরের অদূরে কচুয়া নামক স্থানে ছিল। কালের বিবর্তনে ও তেঁতুলিয়ার করাল গ্রাসে রাজধানী কচুয়ার কোনো চিহ্ন নেই। ইতিহাস থেকে জানা যায়, বাকলার রাজধানী থেকে দনুজমর্দন দেব, তার ছেলে রমা বল্লব, তৎপুত্র কৃষ্ণ বল্লবের পর পর্যায়ক্রমে হরি বল্লব, জয়দেব এবং তার কন্যা কমলা রানী এরা ৪০০ বছর চন্দ্র দ্বীপ রাজ্য শাসন করে গেছেন। রাজা জয় দেবের মৃত্যুর পর কন্যা কমলা রানী ১৪৯০ সালে সিংহাসনে বসেন। ওই সময় গৌরের সুলতান ছিলেন আলাউদ্দিন হোসেন শাহ। কথিত আছে ৪০০ বছর যারা চন্দ্রদ্বীপ রাজ্য শাসন করেছেন তাদের মধ্যে সর্বগুণসম্পন্ন শেষ্ঠ শাসক ছিলেন কমলা রানী। নারী হয়েও ওই যুগে রাজ্য শাসন করা ছিল অকল্পনীয়। কমলা নেই, আছে শুধু কালের সাক্ষী হয়ে চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের শোর্যবীর্যের স্মৃতিচিহ্ন কমলা রানীর দীঘি। কথিত আছে, কমলার নামেই দীঘির নামকরণ করা হয়েছে। ওই দীঘিতে ডুবেই কমলা মৃত্যুবরণ করেন। দীঘিতে ডুবে কমলার মৃত্যু হওয়ার কারণে ইংরেজ লেখকরা বাউফলকে বউ-ফল নামে অভিহিত করেন। স্ত্রী কমলার নামেই দীঘির নামকরণ করা হয়। দীঘির পশ্চিম পাড়ে শ্বেতপাথর দিয়ে ঘাট বাঁধানো হয়। দীঘি কাটা হলেও আশ্চর্যের বিষয় দীঘিতে পানি ওঠে না।







-সাইফুল ইসলাম, বাউফল

0 comments:

Post a Comment