ঢাকার সদরঘাট থেকে সকালের দিকে বেশ কয়েকটি লঞ্চ চাঁদপুরের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। সেগুলোর যে কোনো একটিতে চড়তে পারেন। সকালবেলার বুড়িগঙ্গাকে দেখতে দেখতে চলতে থাকবেন সামনে। শীতলক্ষ্যা, ধলেশ্বরীকে পেছনে ফেলে লঞ্চ এক সময়ে এসে পড়বে মেঘনায়। আগের নদী দুটি থেকে মেঘনার চিত্র এখন একটু ভিন্ন। বিশাল মেঘনার বুকে এখন শত শত জেলে-নৌকা। ঢেউয়ে দুলতে দুলতে সবাই ব্যস্ত ইলিশ ধরতে। কেই জাল টানছেন, কেউবা ধরে আছেন হাল। রুপালি ইলিশকে জালে আটকাতে পেরে কারো মুখে আবার আনন্দের হাসি। কোনো নৌকার দিকে একটু সময় নিয়ে তাকিয়ে থাকলে দেখতে পাবেন জীবন্ত ইলিশের ছটফটানি।
লঞ্চে সদরঘাট থেকে চাঁদপুর আসতে তিন থেকে চারঘণ্টা সময় লাগবে । আর মেঘনা নদীতে যেতে সময় লাগবে ঘণ্টা দুয়েকের মতো। লঞ্চের পাশে দাঁড়িয়ে এ দুঘণ্টা সময়ের পুরোটাই দেখা যাবে ইলিশ ধরার দৃশ্য। কখনো রোদ আবার কখনো বৃষ্টি। এরই মধ্যে জেলেরা তাদের ছোট নৌকা নিয়ে খরস্রোতা মেঘনায় ব্যস্ত ইলিশ ধরতে। ইলিশধরা দেখতে দেখতে মেঘনা নদীতে পিছু ফেলে একসময় লঞ্চ এসে ঢুকবে ডাকাতিয়া নদীতে। সামনেই চাঁদপুর স্টেশন।
চাঁদপুরে নেমে প্রথমেই যেতে পারেন এ অঞ্চলের ইলিশের মোকাম বড় স্টেশনে। চাঁদপুরে যতো ইলিশ ধরা পড়ে, তা দেশে এবং দেশের বাইরে পাঠানো হয় এখান থেকেই। ইলিশের বাজার ঘুরে ইচ্ছে হলে পছন্দের ইলিশ কিনেও নিতে পারেন। দামও এখানে তুলনামূলক অনেক কম। ঢাকায় নিয়ে আসার জন্য বরফ দিয়ে ইলিশ প্যাকেট করারও ব্যবস্থা আছে এ বাজারে। ইলিশের বাজার শেষ করে ঘুরে দেখতে পারেন চাঁদপুর শহর। এ শহরটি বেশ পুরোনো। ঘন্টা হিসেবে রিকশা ভাড়া করে ঘুরতে পারেন চাদপুর শহরের অলিগলিতে। শহরের পশ্চিম পাশ দিয়ে বয়ে গেছে মেঘনা নদী। শেষ বিকেলে শহরের পশ্চিম প্রান্তের শহর-রক্ষা বাঁধে চলে আসতে পারেন। সেখানে দাঁড়িয়ে দেখতে পারেন মেঘনায় সন্ধ্যা নামার মনোরম দৃশ্য। দিনে দিনে ফিরতে চাইলে বিকেলের কোনো লঞ্চে উঠতে হবে ঢাকার উদ্দেশে। আর হাতে সময় থাকলে রাতটা কোনো এক হোটেলে কাটিয়ে সকালের লঞ্চে ফিরতে পারেন।
কিভাবে যাবেন
ঢাকার সদরঘাট থেকে এমভি সোনারতরী (০১৭১৬৫০১০৭৭) সকাল ৭.১০ মিনিটে ছাড়ে চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে। সকাল ৮.০০ মিনিটে ছাড়ে এমভি মেঘনা রানী, সকাল ৯.১৫ মিনিটে এমভি বোগদাদীয়া, বেলা ১১.০০ মিনিটে ছাড়ে ময়ূর -১, দুপুর ১.৩০ মিনিটে ছাড়ে ময়ূর-২, দুপুর ২.৩০ মিনিটে ছাড়ে এমভি ঈগল, বিকাল ৩.৩০ মিনিটে আল বোরাক, রাত ১১.৩০ মিনিটে এম ভি বোগদাদীয়া এবং রাত ১২.৩০ মিনিটে এমভি তুতুল। আর চাঁদপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছাড়ে সকাল ০৮.০০ মিনিটে ঈগল, বেলা ১১.০৫ মিনিটে তুতুল, বেলা ১১.৫৫ মিনিটে রফরফ, বিকেল ০২.০০ মিনিটে মেঘনা রানী, রাত ১১.১০ মিনিটে বোগদাদীয়া, রাত ১২.১৫ মিনিটে এমভি ময়ূর-২। এসব লঞ্চে, ঢাকা-চাঁদপুর অথবা চাঁদপুর-ঢাকার ভাড়া জনপ্রতি প্রথম শ্রেণীর একক কেবিন ৩০০-৩৫০ টাকা, দ্বৈত কেবিন ৫০০-৬০০ টাকা এবং তৃতীয় শ্রেণীর ভাড়া ১৩০-১৫০ টাকা।
কোথায় থাকবেন
শহরে থাকার জন্য বেশকিছু হোটেল আছে। ভালো দু-একটি হোটেল হলোÑহোটেল প্রিন্স (০৮৪১-৬৩৫৬২, এসি কক্ষ এসি ৫০০- ৬০০ টাকা, সাধারণ কক্ষ ২০০-৩০০টাকা )। হোটেল তাজমহল (০৮৪১- ৬৩২৫৪, এসি কক্ষ ৫০০- ৬০০ টাকা, সাধারণ কক্ষ ১৫০-৩০০টাকা )। হোটেল রজনীগন্ধা (০৮৪১-৬৫৩৯৮, এসি কক্ষ ৫০০- ৬০০ টাকা, সাধারণ কক্ষ ১৫০-৩০০টাকা)।
সতর্কতা
এখন মেঘনা বেশ উত্তাল। তাই ইলিশ ধরা দেখতে কোন জেলেনৌকায় উঠতে চেষ্টা করবেন না। যাওয়া কিংবা আসার পথে লঞ্চে বসে খুব কাছে থেকেই ভালোভাবে ইলিশ ধরার দৃশ্য দেখা যায়।
Source:Ittefaq
0 comments:
Post a Comment