Wednesday, September 15, 2010

সেরা ১০ প্রেমের ছবি

1 comments
ভালোবাসার আবেদন চিরন্তন এবং বিশ্বব্যাপী। সময়ের বিবর্তনে সেলুলয়েডে প্রেমের ধারায় পালাবদল এসেছে। রুপালি পর্দায় প্রেমিক-প্রেমিকার রোমান্টিকতায়ও অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আজও প্রেমের ধারা বহমান হিন্দি সিনেমায়। তবে পরিবেশ ও প্রেক্ষাপটের সাথে তাল মিলিয়ে প্রেমের গল্পে নতুন নতুন চমক আসছে। যুগে যুগে নির্মিত হয়েছে অগণিত প্রেমের ছবি। তেমনি সেরা ১০ প্রেমের ছবির কথা তুলে ধরেছেন রেজাউল করিম খোকন



মুঘল এ আজম

১৯৬০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘মুঘল এ আজম’ ছবিটি হিন্দি সিনেমার ইতিহাসে সর্বকালের সর্বসেরা একটি চলচ্চিত্র হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। কে আসিফ পরিচালিত এ ছবির বিভিন্ন দৃশ্য এবং ঘটনাবলী নিয়ে দর্শক এখনও নষ্টালজিক আলোচনায় মুখর হলেও একটি অলটাইম ক্ল্যাসিক লাভস্টোরি হিসেবে অতীতের মতো আগামীতেও দর্শক হƒদয়ে মুগ্ধতার পরশ বুলিয়ে যাবে বিখ্যাত এই ছবিটি। আর এ ছবির গানগুলো আজও সবাইকে আবিষ্ট করে তোলে। দিলীপ কুমার, মধুবালা, পৃথ্বিরাজ কাপুর অভিনীত ‘মুঘল এ আজম’ ছবিটি হিন্দি সিনেমার ইতিহাসে সেরা প্রেমের ছবি হিসেবে, কালজয়ী সৃষ্টি হিসেবে পরিগণিত হবে আজীবন।



দেবদাস

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিখ্যাত এবং বহুল পঠিত উপন্যাস ‘দেবদাস’ অবলম্বনে বাংলার পাশাপাশি হিন্দিতেও চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। ১৯৫৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বিমল রায় পরিচালিত ‘দেবদাস’ ছবিটি হিন্দি সিনেমার ইতিহাসে একটি উজ্জ্বল অবস্থানে রয়েছে। দেবদাস চরিত্রে দিলীপ কুমারের অপূর্ব অভিনয়ের কথা দর্শক সবসময়ে বিশেষভাবে স্মরণ করবে। তার অসাধারণ পারফরমেন্সের মাধ্যমে সেলুলয়েডে ‘দেবদাস’ চরিত্রটি পারফেক্টভাবে ফুটে উঠেছিল। পরবর্তীতে ২০০২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সঞ্জয়লীলা বানসালির ‘দেবদাস’ ছবিটি দর্শকমনে সাড়া জাগালেও এ ছবিতে দেবদাস চরিত্রে শাহরুখ খানের গেট আপ এবং আচরণ নিয়ে নানা বিতর্ক এবং সমালোচনা হয়েছে।



ববি

টিনএজার রোমান্সের ছবি ‘ববি’ হিন্দি সিনেমার ইতিহাসে নতুন এক ধারার সূচনা করেছিল। ঋষি কাপুর-ডিম্পল কাপাডিয়া অভিনীত এ ছবিটি হিন্দি সিনেমার আধুনিক প্রেম কাহিনীর সার্থক উপস্থাপনা ছিল। সবাই যখন পুরোনো ঢং-এর ম্যাড়ম্যাড়ে প্রেম কাহিনীর ছবিগুলো দেখতে দেখতে এক ঘেয়ে বোধ করছিল, ঠিক তখনই নতুন সঞ্জীবনী সুরার মাদকতা ছড়িয়ে দিয়েছিল এ ছবিটি। তরুণ বয়সী দর্শক তো বটেই, পরিণত বয়সের দর্শকরাও ‘ববি’র প্রেমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলেন। বক্স অফিসে রানওয়ে হিট মুভি হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় হিন্দি সিনেমার ইতিহাসে নতুন বিপ্লবের সূচনা করেছিল ‘ববি’।



কেয়ামত সে কেয়ামত তক

হিন্দি সিনেমার ইতিহাসে মাঝে-মধ্যে হঠাৎ প্রচন্ড আলোর ঝলকানি নিয়ে আবির্ভূত হয়েছে বেশ কিছু সুপার ডুপার হিট লাভ স্টোরি মুভি। ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’ তেমন একটি ব্লক বাস্টার হিট প্রেমের ছবি। যা দর্শকদের ভীষণভাবে আচ্ছন্ন করে ফেলেছিল। মনসুর খান পরিচালিত এ ছবিতে সেই সময়ের জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠিত কোনো নায়ক-নায়িকা ছিল না। সম্পূর্ণ নতুন মুখের নায়ক নায়িকা আমির খান ও জুহি চাওলা তাদের ফ্রেশলুক এবং চমৎকার সাবলীল রোমান্টিক অভিনয়ের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবেই সবার হƒদয়ে ঠাঁই করে নিতে পেরেছিলেন। রোমিও জুলিয়েটের প্রেম কাহিনীর আদলে এ ছবির কাহিনী গড়ে উঠলেও দর্শক ভিন্ন ট্রিটমেন্টের কারণে ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’ ছবিকে আশাতীতভাবে গ্রহণ করেছিল।



ম্যায়নে পেয়ার কিয়া

রোমান্টিক ছবির ধারায় কাহিনীতে তেমন নতুনত্ব না থাকলেও সুরুজ বারজাতিয়া পরিচালিত ‘ম্যায়নে পেয়ার কিয়া’ ছবিটি বলিউডি সিনেমায় নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল। এ ছবির মাধ্যমেই রাতারাতি সুপারস্টার-এ পরিণত হয়েছিলেন নতুন নায়ক সালমান খান এবং নায়িকা ভাগ্যশ্রী। ধনী-গরীবের সামাজিক বৈষম্য ও প্রেম ভালোবাসা নিয়ে এর আগে প্রচুর হিন্দি ছবি নির্মিত হলেও ‘ম্যায়নে পেয়ার কিয়া’র নির্মাণ, শিল্পীদের অভিনয়, পর্দা উপস্থিতি, গান, নাচ সবকিছুতেই ভালোলাগার মতো বেশকিছু নতুনত্বের ছোঁয়া ছিলÑযা দর্শকদের আবিষ্ট করেছিল প্রচণ্ডভাবে।



দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে

আদিত্য চোপড়া পরিচালিত প্রথম ছবি ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’ মুক্তি পায় ১৯৯৫ সালে। বলিউডি সুপার ডুপার হিট মুভির ইতিহাসে অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে এ ছবিটি। শাহরুখ খান-কাজল জুটির আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা সৃষ্টির পেছনে এ ছবিটি বিরাট ভূমিকা রেখেছে। তাদের দুজনের অভিনয়ে এক ধরনের স্বাভাবিকতা ও স্বতঃস্ফূর্ততা চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছিল। শাহরুখ-কাজলের মধ্যকার পারস্পরিক আন্ডারস্ট্যান্ডিং এবং কেমিস্ট্রি দর্শক প্রাণভরে উপভোগ করেছেন। ১৯৯৬ সালে ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’ ছবিটি ১০টি ক্যাটাগরিতে ফিল্ম ফেয়ার অ্যাওয়ার্ড জিতে নেয়।



কুচ কুচ হোতা হ্যায়

রোমান্টিক হিন্দি সিনেমার ধারায় শাহরুখ খান, কাজল ও রানী মুখার্জি অভিনীত ‘কুচ কুচ হোতা হ্যায়’ ছবিটি সাফল্যের নতুন মাইলফলক স্থাপন করেছিল। অল্প বয়সী নির্মাতা করন জোহর প্রথম ছবিতেই সাফল্যের চমক দেখিয়ে হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে বিগ শট পরিচালক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। কলেজ ক্যাম্পাসে তরুণ-তরুণীর বন্ধুত্ব, মেলামেশা এবং প্রেমকে দারুণ স্মার্টলি তুলে ধরা হয়। সেই সম্পর্ক এক সময় অন্যদিকে গড়ায়। প্রেম-বিরহকে গতানুগতিকতার বাইরে নতুন আমেজে তুলে ধরার ক্ষেত্রে অদ্ভুত মুন্সিয়ানা লক্ষ্য করা গেছে এ ছবিতে। শাহরুখ খান- কাজল জুটির রোমান্টিসিজম রুপালি পর্দায় আবারও ম্যাজিক সৃষ্টি করেছিল ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’র পর। ‘কুচ কুচ হোতা হ্যায়’ ছবির রোমান্টিক মেলোডিয়াস গানগুলোও দর্শকদের আবিষ্ট করেছে।



কহো না পেয়ার হ্যায়

রোমান্টিক হিন্দি সিনেমার ইতিহাসে আরেকটি নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছিল ‘কহো না পেয়ার হ্যায়’ ছবিটি। রাকেশ রোশন পরিচালিত এ ছবিটি অভূতপূর্ব সাফল্যের চমক দেখানোর পাশাপাশি নতুন শতাব্দীর সূচনা লগ্নে দারুণ উজ্জ্বল সম্ভাবনার এক নতুন সুপারস্টার অভিনেতা ঋত্বিক রোশনকে উপহার দিয়েছে। এ ছবিটি কাহিনীতে তেমন নতুনত্ব না থাকলেও ছবিটি পরিচালনায় অতিমাত্রায় যতেœর প্রকাশ, নয়ন জুড়ানো লোকেশনে শুটিং, নতুন মুখ ঋত্বিক রোশন ও আমিশা প্যাটেলের প্রাণবন্ত অভিনয়, ঋত্বিকের নতুন স্টাইলের কোরিওগ্রাফি, অনেকগুলো শ্রুতিমধুর গান ‘কহো না পেয়ার হ্যায়’কে বক্স অফিসে সুপার ডুপার হিট করেছিল। আর এ ছবির বিরাট সাফল্য সাধারণ মানের একজন চিত্রনির্মাতা রাকেশ রোশনকে আপগ্রেডেড স্ট্যাটাসে প্রতিষ্ঠিত করেছে।



হাম দিল দে চুকে সানাম

সঞ্জয়লীলা বানসালির সুপারহিট মুভি ‘হাম দিল দে চুকে সানাম’ রোমান্টিক গল্পের অপূর্ব এক চলচ্চিত্র রূপ হিসেবে দর্শকনন্দিত হয়েছে। সালমান খান, ঐশ্বরিয়া রাই ও অজয় দেবগন অভিনীত এ ছবির কাহিনীতে তেমন অসাধারণত্ব না থাকলেও এর নির্মাণে ছিল অপূর্ব চমক। এ ছবিতে সালমান-ঐশ্বরিয়া জুটির কেমিস্ট্রিটা ছিল অসাধারণ। অভিনীত চরিত্রে তারা মন-প্রাণ ঢেলে অভিনয় করেছিলেন। সালমান-ঐশ্বরিয়ার প্রেম বিরহের পাশাপাশি অজয় দেবগনের সঙ্গে ঐশ্বরিয়ার দাম্পত্য সংকট ইত্যাদি দর্শকদের আবিষ্ট করে রেখেছে। ফলে একটি উল্লেখযোগ্য উপভোগ্য রোমান্টিক ছবি হিসেবে দর্শক নন্দিত হয়েছে ‘হাম দিল দে চুকে সানাম’।



সিলসিলা

অমিতাভ বচ্চন-জয়া ভাদুড়ি-রেখা-সঞ্জীব কুমারকে নিয়ে ‘সিলসিলা’ ছবিটি নির্মাণ করে হিন্দি সিনেমার জগতে রীতিমতো আলোড়ন তুলেছিলেন প্রযোজক পরিচালক যশ চোপড়া। প্রেম এবং পরকীয়ার বিষয়গুলো ‘সিলসিলা’ ছবিতে অত্যন্ত সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছিল। অমিতাভ-রেখার প্রেমময় সম্পর্ক নিয়ে তখন বাস্তবেই বেশ হৈ চৈ চলছিল। বিবাহিত অমিতাভ ঘরে সুন্দরী অভিনেত্রী বউ জয়াকে রেখে বাইরে সুন্দরী আবেদনময়ী অভিনেত্রী রেখার প্রেমে জড়িয়ে পড়েছিলেন। রেখার কারণে অমিতাভ-জয়ার দাম্পত্য জীবনে ঝড়ো হাওয়া বইতে শুরু করেছিল। পরিচালক প্রযোজক যশ চোপড়া ঠিক সেই সময়ে ত্রিভুজ সম্পর্কের অদ্ভূত এক প্রেমের গল্প নিয়ে ‘সিলসিলা’ ছবিটি নির্মাণ করেন। যা তখন দর্শকদের ভীষণভাবে আলোড়িত করেছিল। এখনও বলিউডি উল্লেখযোগ্য সেরা রোমান্টিক ছবিগুলোর অন্যতম একটি হিসেবে বিবেচিত হয় ‘সিলসিলা’।



জানে তু ইয়া জানে না

এ ছবির গল্প শুনলে খুব কম দর্শকই প্রথম দফায় আকৃষ্ট হবেন ছবিটি দেখতে। সদ্য কলেজ জীবন শেষ করে বেরিয়েছে ইমরান খান, জেনেলিয়া আর তার বন্ধুরা। ইমরান ও জেনেলিয়া মানে পর্দার জয় ও অদিতি পরস্পরের খুব ভালো বন্ধু। সারাক্ষণ একজন আরেকজনের সঙ্গে খুনসুটি করে বেড়ায়। একজন আরেকজনের সঙ্গে ঝগড়া করে সামান্য বিষয় নিয়ে। এ জন্য সবাই ভাবে, এই জুটির মিলন জীবনে কোনোদিনই হবে না। বন্ধুরা দুজনের জন্য পছন্দসই মানুষ খুঁজতে শুরু করে। এক সময় তারা পেয়েও যায়। তখনই জয় ও অদিতি অনুভব করতে থাকে ‘দে আর মেড ফর ইচ আদার’। বহুশ্রুত এই গল্পকেই পরিচালক আব্বাস টায়ারওয়ালা তার পরিচালনার মুন্সিয়ানায় প্রাণবন্ত করে তুলেছেন। ২০০৮ সালের অন্যতম সেরা ব্যবসাসফল ছবি হিসেবে গণ্য হয়েছে ‘জানে তু ইয়া জানে না’। আর এই ছবিতে নায়ক চরিত্রে অভিনয়ের সুবাদে হালের তরুণ-তরুণীদের হার্টথ্রবে পরিণত হয়েছেন ইমরান খান। যেমনটা হয়েছিলেন বিশ বছর আগে ইমরানের মামা আমির খান ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’ ছবির মাধ্যমে। একুশ শতকের একটি তরতাজা তারুণ্যদীপ্ত প্রেমের ছবি হিসেবে ‘জানে তু ইয়া জানে না’ বলিউডে দারুণ চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। এভাবেই ছবিটি উল্লেখযোগ্য প্রেমের ছবির তালিকায় সহজেই ঠাঁই করে নিতে পেরেছে।

1 comments:

Post a Comment