Thursday, September 16, 2010

মিশর

0 comments
শুধু একটি দেশ কিংবা জাতিগোষ্ঠী’র সংস্কৃতি হিসেবেই বরং মিশরীয় সংস্কৃতি একটি উল্লেখযোগ্য সময় ধরে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে বিশ্ব সাংস্কৃতিরধারা বিনির্মাণে। বিশ্বের প্রাচীনতম সভ্যতাগুলোর একটি হিসেবে মিশরের সংস্কৃতি বেড়ে উঠেছে প্রায় পাঁচ হাজার বছরের ঐতিহ্যকে লালন করে। এ অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর জটিল অথচ স্থির সংস্কৃতিক ধারা একসময় প্রভাবিত করেছে গোটা ইউরোপ আর মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে আফ্রিকার বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সংস্কৃতিকেও। যদিও পরবর্তী সময়ে ফারাও শাসনের অবসানের পর ধীরে ধীরে মিশরীয় সংস্কৃতিতেও অনুপ্রবেশ ঘটতে থাকে বিশ্বের অপরাপর সাংস্কৃতিক ধারার। মিশরীয় সংস্কৃতির মূল ধারার সাথে মিশতে থাকে ক্রিশ্চিয়ান, আরব আর ইসলামিক সংস্কৃতির ধারা। আর এসব কিছুর সংমিশ্রণে বেড়ে ওঠা মিশরীয় সংস্কৃতির বর্তমান ধারায় যেমন খুঁজে পাওয়া যায় প্রাচীন মিশরীয় ধারার উপস্থিতি, তেমনি এখানে পরিলক্ষিত হয় প্রাচ্যের নব্য সাংস্কৃতিক ধারার প্রভাবও। মিশরীয় সাহিত্যের প্রাচীনতম কিছু নিদর্শন খুঁজে পাওয়া যায় পিরামিডের গায়ে। পিরামিডের দেয়ালে অঙ্কিত এইসব লেখা মূলত দেব-দেবী আর মৃত ব্যক্তির স্তুতিবাক্যে পূর্ণ হলেও এর মাঝে প্রাচীন সাহিত্যের ছোঁয়া পাওয়া যায়। এছাড়া মিশরীয়দের সাহিত্যকর্মের দেখা মেলে হায়ারোগ্লিফিক্স কিংবা প্যাপিরাসের পাতায় উৎকীর্ণ বিভিন্ন শব্দগুচ্ছ থেকেও। পরবর্তী সময়ে মিশরীয় সাহিত্যের আরো কিছু নিদর্শন খুঁজে পাওয়া যায় ‘উইজডম টেক্সট’ নামের একধরনের রচনাতেও। এসব উইজডম টেক্সট-এ একদিকে যেমন উঠে এসেছে প্রাচীন সময়ের দর্শনশাস্ত্র তেমনি যাপিত জীবনের নানা বাস্তবতা থেকে শেখা প্রবাদ-প্রবচনের দেখা মেলে এইসব কর্মে। অন্যদিকে, মিশরীয় সাহিত্যের স্বর্ণযুগ হিসেবে স্বীকৃত সময়ে এ অঞ্চলের সাহিত্যকর্মে যেমন দেখা মেলে নেফারতিতি’র রূপের বর্ণনাসমৃদ্ধ বিভিন্ন রচনা, তেমনি মানুষের জীবনাচরণ নিয়ে লেখা বেশ কিছু গ্রন্থও সমৃদ্ধ করে মিশরীয় সাহিত্যকে। এই সাহিত্যকর্মগুলো সমসাময়িক সময়ের বিবেচনায় এতোটাই গুরুত্বের দাবিদার ছিল যে, ৩৩২ খ্রীস্টপূর্ব থেকে শুরু করে ৬৩৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত একটি বড় সময়জুড়ে এসব সাহিত্যকর্ম বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হতে থাকে। এছাড়া এই সময়ের নিদর্শন হিসেবে প্রাপ্ত রোসেটাস্টোনগুলো মিশরীয় সাহিত্যের রহস্য উšে§াচনে পরবর্তী প্রজšে§র গবেষক ও সাহিত্যিকদের সহায়তা করে। সেই সাথে এ সময়ে গড়ে ওঠা বিশ্বের প্রাচীনতম ও সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার আলেকজান্দ্রিয়ার কথা ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের সকল জ্ঞানপিপাসু মানুষের কাছে। মিশরীয় সাহিত্যের মতো মিশরের চিত্রকলা আর স্থাপত্যকলাও বিশ্বসংস্কৃতিকে উপহার দিয়েছে গর্ব করার মতো অনেক কিছু। আর এই প্রেক্ষিতে জেনে রাখা ভালো যে, একটি শিল্পকর্মকে শুধুমাত্র মনের খেয়াল হিসেবে গড়ে না তুলে এতে নির্দিষ্ট কোড মেনে ডিজাইন এলিমেন্ট-এর প্রয়োগরীতি উদ্ভাবন করে মিশরীয়রাই। আর সমসাময়িক সময়ে মিশরীয় চিত্রকলা আধুনিক নানা ভাবধারার প্রতিফলন ঘটিয়ে এই ধারাকে যারা বয়ে নিয়ে যান তাদের মধ্যে রয়েছেনÑমাহমুদ মোখতার, আবদেল হাদি আল গাজ্জার, ফারুক হোসনি এবং হুসেইন জিবালি থেকে শুরু করে অসংখ্য বিশ্বনন্দিত চিত্রকর। আর মিশরের স্থাপত্যকীর্তির অনন্য নিদর্শন হিসেবে পিরামিড কিংবা স্ফিংস-এর মতো নান্দনিক স্থাপত্যকর্মের কথা তো সবারই জানা।
০০ রাশেদুল হাসান শুভ ০০

0 comments:

Post a Comment