Wednesday, September 22, 2010

বি.আই.টি

0 comments
বি.আই.টি, ঢাকা ছিল দেশের ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার ক্ষেত্রে জাতীয় সংসদে আলোচিত একটি নাম। সময়ের প্রয়োজনে ‘বি.আই.টি’গুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীতকরণ দাবীতে আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। বি.আই.টি ঢাকা-এর ছাত্র-ছাত্রীরাও বসে ছিল না। অনেক ত্যাগ, অনেক সংগ্রাম, অনেক অপেক্ষা। অবশেষে সেই ঐতিহাসিক দিন। ২০০২ এর ১০ মার্চ, ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনের ৪৬তম বার্ষিক কনভেনশনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী দেশের চারটি বি.আই.টিকে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের ঘোষণা দেন। বি.আই.টি,ঢাকা -এর ছাত্র-ছাত্রীরা মেতে উঠে স্মরণকালের শ্রেষ্ঠ আনন্দ উৎসবে।

২০০৩ সাল। বি.আই.টি,ঢাকা-এর ভাগ্যাকাশে নেমে আসে অমানিশার কালো অন্ধকার। নাম করণ নিয়ে সৃষ্টি হয় জটিলতা। শুরু হয় আন্দোলন। আর তাই শেষ ঘোষণার জন্য অপেক্ষা করতে হলো ‘বি.আই.টি,ঢাকা’-এর হাজারো ছাত্র-ছাত্রীর।

২০০৩ সালের ১২ মে: জাতীয় সংসদে দেশের চারটি বিভাগীয় ‘বি.আই.টি’গুলোকে বিশ্ববিদ্যালয় রূপ দিয়ে একটি বিল উপস্থাপন করা হবে। শ্বাসরুদ্ধকর অপেক্ষা শেষে ‘বি.আই.টি,ঢাকা’কে ‘গাজীপুর প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ নাম করণ করে ‘গাজীপুর প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-২০০৩’ বিল উপস্থাপন করা হয়। রাগে-ক্ষোভে ফেটে পড়লো গোটা ক্যাম্পাস। আবাসিক হলগুলোর বাতি নিভিয়ে দেয়া হলো। রাতের নির্জনতাকে ছাপিয়ে সকল ছাত্র-ছাত্রীরা হল থেকে বেরিয়ে পড়লো। সবার মুখে শ্লোগান ‘নাম নিয়ে তাল বাহানা, চলবেনা চলবে না’, ‘রক্তের বন্যায়, ভেসে যাবে অন্যায়’। এভাবেই আন্দোলন চলে দিনের পর দিন।

১৪ই মে, ২০০৩ সাল: সকালের সূর্যোদয় হলো এক সম্ভাবনার পথে। সময়ের এক নির্ভীক পথপদর্শক ‘পুলক কান্তি বড় ুয়া’। সবাই তাকে ভালবেসে ডাকে ‘পুলক দা’ বলে। সকলের ভালবাসার বহুমুখী প্রতিভার ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন এই মানুষটাই সময়ের অন্যতম দাবী পূরণীয় ব্যক্তিত্ব হয়ে নিজ কাঁধে তুলে নিলেন সমস্ত আন্দোলনের ভার। ড. এফ.আর. খান হলের সামনে একটি চেয়ারের উপর দাঁড়িয়ে তৎক্ষণাৎ ডাকা মিছিলোত্তর সভায় ‘বি.আই.টি, ঢাকা’-এর ইতিহাসে তিনি ঘোষণা করলেন স্মরণকালের এক ব্যাতিক্রমী, গঠনতান্ত্রিক, মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের উপযুক্ত আন্দোলনের কর্মসূচী। পুলক কান্তি বড় ুয়ার সেই বক্তব্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলো, জীবন দিয়ে হলেও শিক্ষার মর্যাদাকে প্রতিষ্ঠা করবে। লক্ষ্য একটাই ‘ডুয়েট।’

তখনকার ‘বি.আই.টি, ঢাকা’-এর প্রধান তিন ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বাংলাদেশ ছাত্রদল এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবির। পুলক কান্তি বড় ুয়াকে প্রধান সমন্বয়কারী করে ছাত্র সংগঠনের প্রধানদের নিয়ে গঠিত হলো ‘ডুয়েট বাস্তবায়ন পরিষদ’। কমপ্লেক্স ভবনের দ্বিতীয় তলায় সাবেক ছাত্র সংসদ ভবনে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ডুয়েট বাস্তবায়ন পরিষদ’-এর স্থায়ী অফিস।

একটি ব্যতিক্রমধর্মী আন্দোলনকে সঠিক ভাবে ধাবমান করার লক্ষ্য নিয়ে তৈরি হয়েছিল কূটনৈতিক মিশন। এই মিশনের আন্ডারে ছিল চারটি ফোর্স। সেই সাথে একটি সেল গঠিত হয়েছিল- ‘ইনফরমেশন সেল’। এই সেলের কাজ ছিল সংবাদ মাধ্যমগুলোকে সঠিক তথ্য প্রদান করা।

মৃত্যুঞ্জয়ী স্কোয়াড: ‘ডুয়েট বাস্তবায়ন পরিষদ’-এর আহবানে তিন শত সদস্য বিশিষ্ট ‘মৃত্যুঞ্জয়ী স্কোয়াড’ গঠিত হয়। ‘বি.আই.টি, ঢাকা’-এর উম্মুখ ছাত্র-ছাত্রীরা স্বহ¯েত স্বইচ্ছায় তাদের নাম লিপিবদ্ধ করে একটি খাতায়। এরপর মাসুদুর রহমান বাচ্চু প্রধান করে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী স্কোয়াড’ এগিয়ে যায় ডুয়েট বাস্তবায়নের সাফল্যের নিমিত্তে। ঘোষনা করা হয়: ‘মৃত্যুঞ্জয়ী স্কোয়াড’-এর সকল সদস্যদের এই মর্মে নিদের্শ দেয়া যাচ্ছে যে, যদি কখনো কোন কুচক্রী মহল আমাদের মধ্যে অরাজকতা, বিভেদ এবং বিশৃংখলা সৃষ্টি করতে চায়, ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারীদের একাত্মতার মধ্যে ভুল বুঝবিুঝি সৃষ্টির চেষ্টা করে সর্বোপরি আমাদের এই আন্দোলনকে নস্যাৎ করবার মত হীন ও ন্যক্কারজনক চক্রান্তে লিপ্ত হয়ে থাকে তবে তোমরা তাদের প্রতিরোধ করবে।

সাংস্কৃতিক স্কোয়াড: সুমন বসাক অর্ণব, মো: সফিক আহমেদ সুমন ও মো: আনোয়ার হোসেনকে প্রধান করে গঠিত হয় ‘সাংস্কৃতিক স্কোয়াড’। এই স্কোয়াডে অন্তর্ভুক্ত সকল সদস্য ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে আন্দোলনের চেতনা জাগ্রত করার লক্ষ্যে নিরলসভাবে উপস্থাপন করে ডুয়েট সংগীত, গণসংগীত, বিদ্রোহী কবিতা, গণজাগরণের গান। ‘সাংস্কৃতিক স্কোয়াড’ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সাথে সাথে উপস্থাপন করে চলে চলমান আন্দোলনের উপর ভিত্তি করে নাটক ‘আমরা করবো জয়’।

ছাত্রী ব্রিগেড: আন্দোলনে ছাত্রীরাও থেমে ছিল না। গঠিত হয়েছিল ‘ছাত্রী ব্রিগেড’। ছাত্রী ব্রিগেডের কমান্ডার ছিলেন ’ছুরাইয়া জেবিন লুবনা’। ডুয়েট বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ‘বি.আই.টি, ঢাকা’-এর আবেগাপ্লুত ১ হাজার ২০ জন ছাত্র-ছাত্রী ১০২০ ফুট দৈর্ঘ্যরে ব্যানারে তাদের মনের কথা লিখে। হƒদয়ের চাওয়া ও প্রত্যাশা পূরণের ব্যাকুলতা ধৈর্যের বাঁধ যেন মানতে চায় না। তাইতো তৎকালীন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর ১০২০ জন ছাত্র-ছাত্রী ১০২০টি চিঠি লিখে। দাবী একটাই ডুয়েট চাই।

কূটনৈতিক তৎপরতায় এক পর্যায়ে ‘এস-ফোর্স’ খুঁজে পেল এক ভরসার নীড় ‘এসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশকে (এ্যাব)। পুলক কান্তি বড় ুয়া’র নেতৃত্বে ‘এস-ফোর্স’ এ্যাব নেতৃবৃন্দকে বুঝাতে সক্ষম হয় ‘ডুয়েট’ নাম করণের প্রয়োজনীয়তা। আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষনা করলো এ্যাব। ২৫শে মে, ২০০৩ সাল, মতবিনিময় সভায় এ্যাব নেতৃবৃন্দ দ্ব্যর্থহীনভাবেই ঘোষণা করলো ডুয়েট বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবেন তারা।

এমনই অনেক ত্যাগ, অনেক সংগ্রাম, অনেক অপেক্ষা শেষে সকলের কাংক্ষিত সেই ঐতিহাসিক দিন। ১৪ জুলাই, ২০০৩ দিবাগত রাত। মহান জাতীয় সংসদে সংশোধনী বিল পাস হয়। আনন্দে উত্তাল হয়ে পড়লো পুরো ক্যাম্পাস। আর সেই সূত্র ধরেই ১ সেপ্টেম্বর, ২০০৩ দিন হতে ‘বি.আই.টি, ঢাকা’ হয়ে গেল ‘ডুয়েট’ অর্থ্যাৎ ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। একই দিনে বাকী তিনটি ‘বি.আই.টি’ও বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হলো। ‘বি.আই.টি, চট্টগ্র্রাম’ হয়ে গেল- চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট), ‘বি.আই.টি, রাজশাহী’ হয়ে গেল রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়(রুয়েট) এবং ‘বি.আই.টি, খুলনা’ হয়ে গেল খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)।
০০ কে. এম. মুনীর হোসাইন

0 comments:

Post a Comment