Saturday, September 18, 2010

টেলিফোন

0 comments
ষোলো বছরের এক তরুণ। বোস্টন শহরে এক ধনীর বাড়িতে গৃহশিক্ষকের কাজ করতেন। যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে, সে সময় সবেমাত্র টেলিগ্রাফ আবিষ্কৃত হয়েছে। কিন্তু টেলিগ্রাফের মাধ্যমে কেবলমাত্র খবরের সংকেত পাঠিয়ে মানুষ সন্তুষ্ট থাকতে পারছে না। চাইছে, মানুষের কণ্ঠস্বরকে সোজাসুজি প্রমাণ করতে। তাই অনেকেই শুরু করেছেন গবেষণা।

তরুণ গৃহশিক্ষকটির বিজ্ঞানের প্রতি যথেষ্ট আগ্রহ ছিল এবং টেলিগ্রাফের কথা তিনি ভালোভাবেই জানতেন। তারও একদিন ইচ্ছা হলো, তারের মাধ্যমে মানুষের কথাকে প্রেরণ করা যায় কিনা সে বিষয়ে পরীক্ষা করতে। তরুণটির আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না। অথচ গবেষণার নেশা ছিল প্রবল। অনেক ভেবে-চিন্তে যার বাড়িতে শিক্ষকতা করতেন, একদিন তাকেই অনুরোধ জানালেন। ভদ্রলোকের মনটি ছিল ভালো। তিনি তরুণটিকে না বলতে পারলেন না। বিনা ভাড়ায় নিচের তলার একটি ঘর দিলেন, সেই সঙ্গে কিছু টাকা-কড়ি। তরুণটি এবার হাতে স্বর্গ পেলেন। বাজার থেকে কিনে আনলেন হরেক রকমের যন্ত্রপাতি। যার ফলে ভদ্রলোকের দেওয়া টাকা তো নিঃশেষ হলোই, তার ওপর নিজের যা সম্বল ছিল তাও গেল।

দিন যায়। তরুণের গবেষণায় এতটুকু ছেদ পড়ে না। মাসের পর মাস, বছরের পর বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেল, তবুও গবেষণার বিরাম নেই। উৎসাহে এতটুকু ভাটা পড়েনি। কোনদিকে খেয়ালও ছিল না তার। খেয়াল হলো সেদিন-ঘরের মালিক যেদিন বললেন, ঘর ছেড়ে দিতে। তরুণটি এবার দিশেহারা হয়ে পড়লেন। কি করবেন তিনি এখন? তরুণটির হাতে তখন কানাকড়িও নেই। একমাত্র মনের জোরকে সম্বল করে বোস্টন শহরে একটি ঘর ভাড়া করে উঠে এলেন। যত বন্ধু-বান্ধব ছিল সবাইকে আর্থিক সাহায্যের জন্যে অনুরোধ জানালেন। সৌভাগ্যক্রমে লাভ করলেন, এক গবেষণাপাগল বন্ধুকে। প্রচুর টাকা পয়সার মালিক ছিলেন বন্ধুটি। দুই তরুণ আবারও নিমগ্ন হলেন গবেষণায়। একদিন একটি লম্বা তারের দুই প্রান্তে পাতলা লোহার পাতকে ভালোভাবে বেঁধে, তার উপর তামার তার জড়ালেন। দুই প্রান্তে থাকলেন দুই তরুণ গবেষক। তারপর তারের ভিতর দিয়ে বিদ্যুৎ পাঠিয়ে এক পাশের এক তরুণ কথা বললেন এবং অপরজন শুনলেন। দেখা গেল শব্দটা বড্ড ক্ষীণ। ব্যাপারটা মনের মতো না হলেও উৎসাহ লাভ করলেন। নিশ্চিত হলেন, মানুষের কণ্ঠস্বরকে দূরে পাঠানো সম্ভব। পুনরায় শুরু হলো গবেষণা। অনেকদিন পর সার্থক হলো তাদের প্রচেষ্টা। দুই তরুণ প্রথম বার্তা বিনিময় করেছিলেন একটি বাড়ির উপরতলা হতে নিচের তলা পর্যন্ত। এভাবেই আবিষ্কৃত হয় টেলিফোন। অধ্যবসায়ী এই তরুণটির নাম আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল। টেলিফোন আবিষ্কর্তা হিসেবে বিজ্ঞানের আকাশে যিনি চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন।
খুরশীদা রহমান চৈতী

0 comments:

Post a Comment