Saturday, September 18, 2010

স্টেথিস্কোপ

0 comments
১৮০৬ সাল। প্যারিসের নামকরা হাসপাতালে চাকরি করতেন এক ডাক্তার। তার নাম ছিল থিয়োফিল লেনেক, সংক্ষেপে লিনি। একদিন হাসপাতালে বিশেষ ধরনের রোগী ভর্তি হলো। সেকালে স্টেথস্কোপ আবিষ্কার না হওয়ায় ডাক্তারকে রোগীর বুকে কান ঠেকিয়ে হৃৎপিণ্ডের 'ধুক-ধুক' শব্দ শুনতে হতো। লিনিও তাই করলেন। কিন্তু রোগীর হৃৎপিণ্ডের 'ধুক-ধুক' শব্দটা এত ক্ষীণ ছিল যে, তিনি কিছুতেই রোগটা ধরতে পারলেন না।

লিনির মন এতো খারাপ হলো যে, ডিউটি শেষ করে বাসায় না ফিরে চলে গেলেন পার্কের দিকে। এ সময় তার নজরে পড়ল পার্কের এক কোণায় বসে থাকা কয়েকটি বাচ্চা ছেলের দিকে। ছেলেগুলো পার্কের মধ্যে পড়ে থাকা ফাঁপা কাঠের গুঁড়ি দিয়ে মজার খেলা খেলছে। এক ছেলে ফাঁপা কাঠের গুঁড়ির এক প্রান্তে আঘাত করছে, অন্য প্রান্তের ছেলেগুলো কান পেতে তা শোনার চেষ্টা করছে।

ছেলেগুলোর খেলা দেখে লিনির মাথায় হঠাৎ নতুন বুদ্ধি আসে। বাসায় না গিয়ে পুনরায় উপস্থিত হন হাসপাতালে। অসময়ে তাকে দেখে নার্সরা তো অবাক। এক নার্সকে একখানা মোটা কাগজ আনার নির্দেশ দিয়ে সোজা ঢুকলেন তিনি নতুন রোগীর কেবিনে। নার্স মোটা কাগজ নিয়ে আসার পর লিনি ওই মোটা কাগজটাকে গোল করে পাকালেন এবং চোঙের মতো করে মাঝখানে ফাঁকাও রাখলেন। এবার সেই কাগজের নলের একপ্রান্ত রোগীর বুকে এবং অন্যপ্রান্তে ঠেকালেন নিজের কানে। যা ভেবেছিলেন তাই হলো।

রোগীর হৃৎপিণ্ডের ক্ষীণ শব্দটা জোরাল হয়ে কানে এসে ধরা পড়ল। খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠল তার মুখ।

এরপর লিনি কাগজের নল হাসপাতালের সব রোগীর বুকে ঠেকিয়ে পরীক্ষা করতেন। কাগজের নলে অসুবিধা হওয়ার কারণে মিস্ত্রি ডেকে দুটি কাঠের নল তৈরি করে নিয়েছিলেন। দুটি নলকে যুক্ত করেছিলেন একটা পাতলা কাঠের চাকতির ওপর। যখন রোগীর বুক পরীক্ষা করতে হতো তখন ওই চাকতিটা রোগীর বুকে চেপে ধরতেন এবং নলের প্রান্ত গুঁজে দিতেন কানের ভিতর। পরবর্তীকালে স্টেথস্কোপ ধীরে ধীরে উন্নত হয়ে বর্তমানের রূপ ধারণ করেছে। এই আবিষ্কারের মাধ্যমে ডাক্তার লিনি বৈজ্ঞানিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।



-আমিন রহমান নবাব

0 comments:

Post a Comment