Saturday, September 18, 2010

সমুদ্রের উৎপত্তি

41 comments
পৃথিবীর প্রায় একাত্তর ভাগ অংশই পানিতে ঢাকা, আর বাদ বাকিটা ডাঙ্গা অর্থাৎ মহাদেশ। সমুদ্র ও মহাসাগর ধারণ করে রয়েছে মহাদেশের বাইরে এই বিশাল জলরাশি। সমুদ্রের কোথাও কোথাও এত গভীর যে, সেখানে পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু পাহাড় হিমালয়কে ছেড়ে দিলে তার কিছুই আর দেখতে পাওয়া যাবে না। তাই মনে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, এত বিশাল আর গভীর সমুদ্র কি করে তৈরি হলো? এই প্রশ্ন শুধু সাধারণ মানুষের মনকেই নয়, ভূ-বিজ্ঞানীদের চিন্তাকেও নাড়া দিয়েছে। এ বিষয়ে প্রথম উল্লেখযোগ্য মতবাদটি দেন বিবর্তনবাদের প্রবক্তা চার্লস ডারউইনের ছেলে জর্জ ডারউইন। ১৮৭৮ সালে জর্জ ডারউইন শোনালেন মহাসাগর সৃষ্টির ব্যাপারে আশ্চর্য চমকপ্রদ কথা। তিনি বললেন, প্রায় চারশ কোটি বছর আগে পৃথিবীর বাইরের খোলস যখন পুরোপুরি শক্ত হয়নি, ভিতরে নরম-গরম অবস্থা, সেই সময় সূর্যের টানে পৃথিবীর তরল বুক থেকে খানিকটা অংশ ছিটকে বেরিয়ে গিয়েছিল মহাকাশে। সেই উপরে চলে যাওয়া অংশই হলো চাঁদ এবং এরই ফলে পৃথিবীর বুকে তৈরি হলো এক বিরাট গর্ত। যার নাম প্রশান্ত মহাসাগর। জর্জ ডারউইনের এই মতবাদ উনিশ ও বিশ শতকের প্রথমদিকে খুব আলোড়ন তুললেও পরবর্তী সময়ে কোনো বিজ্ঞানী আর এই মতবাদে বিশ্বাস করেননি। এই মতবাদের বিরুদ্ধে বিজ্ঞানীরা যুক্তি দিলেন, ভূ-স্তর সৃষ্টির পর তা যত পাতলাই হোক, এমনই কঠিন হয়ে পড়েছিল যে, তখন তার পক্ষে আর পৃথিবী থেকে উৎক্ষিপ্ত হওয়া সম্ভব ছিল না। তাছাড়া প্রায় সব বিজ্ঞানীই এখন মেনে নিয়েছেন কেবল মাত্র চাঁদই নয়, অন্যান্য গ্রহের উপগ্রহগুলোরও সৃষ্টি হয়েছে গ্যাসীয় অবস্থায়। মানুষ চাঁদ থেকে ঘুরে আসবার পর দেখা গেছে চাঁদের মাটিতে এমন সব পদার্থের সন্ধান মিলেছে, যা এ যাবৎ খোদ পৃথিবীতে মিলেনি। তাছাড়া বয়সের হিসেবে দেখা গেছে, চাঁদের পাথরের বয়স, পৃথিবীর পাথরের বয়সের চেয়ে খানিকটা বেশি। অর্থাৎ চাঁদের পাথর হয়তো পৃথিবীর কিছু আগেই ঠাণ্ডা হয়েছে।

মহাসাগর সৃষ্টির ব্যাপারে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য তত্ত্বটি হলো, জার্মান ভূ-বিজ্ঞানী ওয়েগনারের। ১৯১২ সালে প্রচারিত চলমান মহাদেশ তত্ত্বটিতে তিনি মহাসাগর সৃষ্টির কথা বলেন। ওয়েগনার বলেছেন, আজ থেকে পঁচিশ কোটি বছর আগেও পৃথিবীর মহাদেশ আর মহাসমুদ্রের চেহারা এই রকম ছিল না। তখন পৃথিবীর সব মহাদেশ মিলিয়ে একটিই মহাদেশ ছিল। সেই আদি প্রাগৈতিহাসিক মহাদেশ ঘিরে ছিল এক আদি মহাসমুদ্র প্যানথালসা। ওয়েগনারের মতে, আজ থেকে বিশ কোটি বছর আগে প্রাকৃতিক কারণে মহাদেশটি দু'টো টুকরোয় ভেঙে গিয়ে সরে গেল একে অন্যের কাছ থেকে। তাদের একটা টুকরোর নাম 'গন্ডোয়ানা'। এতে ছিল দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, আর কুমেরু। অন্যটার নাম 'লরেশিয়া'। এতে ছিল ইউরোপ, এশিয়া, গ্রীনল্যান্ড এবং উত্তর আমেরিকা। এ দুই মহাসাগরের মাঝখানে রইল টেথিস সাগর। পরে গন্ডোয়ানা আর লরেশিয়া, আরো কয়েকটা টুকরো ভেঙে গিয়ে ছড়িয়ে পড়ল চারদিকে। আর তাদের মাঝখানে আদি মহাসাগর প্যানথালসার রূপ বদল হয়ে জন্ম নিল আজকের মহাসাগরগুলো। দক্ষিণ আমেরিকা ও আফ্রিকা ভেঙে সরে গেল গন্ডোয়ানা থেকে। এদের মাঝে জন্ম নিল দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগর। এ দু'টি তত্ত্ব ছাড়াও আরো বেশকিছু তত্ত্ব রয়েছে মহাদেশ সৃষ্টির ব্যাপারে। তবে আধুনিক প্রযুক্তি বিজ্ঞানের যুগে সেই তত্ত্বগুলো নেহাতই সেকেলে।
আমিন রহমান নবাব

41 comments:

Post a Comment