Saturday, September 18, 2010

বাংলাদেশে মানুষের সেবায় এক বিদেশিনী

2 comments
ব্রিটেনের মেয়ে সিস্টার জিলিয়ান রোজ বাংলাদেশে মানুষের স্বাস্থ্য সেবায় সারা জীবন কাটিয়ে দিলেন। বৃদ্ধা বয়সেও তিনি প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষের সেবা করে চলেছেন। এখন তিনি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পেতে চান, বাকি জীবনটা এদেশেই কাটাতে চান।

যুক্তরাজ্যের ব্রিস্টল ও বার্মিংহাম থেকে নার্সিং পাস করেন সিস্টার জিলিয়ান রোজ। তারপর বিলেতের আলো ঝলমল জীবন ছেড়ে আজ থেকে ৪৬ বছর আগে ১৯৬৪ সালে ২৪ বছর বয়সে মানব সেবার ব্রত নিয়ে এদেশে আসেন। প্রচার বিমুখ এ বিদেশী মহিলা নেপথ্যে থাকতেই ভালবাসেন। শরীরে বার্ধ্যকের ছাপ পড়েছে। তবু মুখে হাসি লেগেই থাকে সর্বক্ষণ। প্রায় সারাদিন বল্লভপুর মিশন হাসপাতাল ছাড়াও রতনপুর, কার্পাসডাঙ্গা, ও খাজুরা সাব সেন্টারে রোগী দেখেন। গত ৫ আগস্ট তার সাথে আলাপ হয় রতনপুর সাব সেন্টারে। রোগী দেখার ফাঁকে ফাঁকে কথা বলেন তিনি। জানান, এ দেশ ও দেশের মানুষকে ভালবেসে ফেলেছেন। এখান থেকে চলে যেতে মন চাইছে না। বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পেলে এখানেই বাকি জীবন কাটানোর আশা ব্যক্ত করেন তিনি।

সিস্টার রোজ জানান, বাংলাদেশে আসার পর প্রথমে কাজ নেন বরিশালের অক্সফোর্ড পরিচালিত হাসপাতালে। সেখানে ৫ বছর কাজ করেন। ১৯৬৯ সালে চার্চ অব বাংলাদেশ পরিচালিত খুলনার মিশনারি হাসপাতালে কাজ নেন। খুলনাতে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত কাজ করেন। সেখান থেকে বদলী হয়ে মেহেরপুরের মুজিবনগরের বল্লভপুর হাসপাতালে আসেন। সেই থেকে প্রত্যন্ত গ্রামে থেকে দরিদ্র মানুষের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। দেশের অন্যতম পুরানো হাসপাতালগুলোর মধ্যে বল্লভপুর মিশন হাসপাতাল অন্যতম। ১৮৮৯ সালে এ্যালেনডোয়ে নামের একজন মিশনারি এ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। বল্লভপুর ছিল একেবারেই ্দুর্গম পল্লী। যোগাযোগের কোন ব্যবস্থা ছিল না। পায়ে হেঁটে বা গরুর গাড়িতে চড়ে দর্শনা আসতে হতো। তারপর ট্রেনে চড়ে কলকাতা যেতে হতো। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর বল্লভপুর একবারেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তখন দর্শনা থেকে ট্রেনে গোয়ালন্দ ঘাট যেতে হতো, সেখান থেকে স্টিমারে করে ঢাকা।

বল্লভপুরের পাশেই বৈদ্যনাথপুরে জমিদারের পরিত্যক্ত বিশাল আমবাগান। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল এ আম বাগানে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার শপথ গ্রহণ করেন। স্থানটি নতুন নামকরণ হয় মুজিবনগর। এতে এলাকার গুরুত্ব বেড়ে যায়। মুজিবনগরে উপজেলা স্থাপন করা হয়েছে। নির্মিত হয়েছে নতুন নতুন রাস্তা। সিস্টার জিলিয়ান রোজ জানান, তিনি যখন বল্লভপুর আসেন তখন ছিল কাঁচা রাস্তা। মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে গ্রামে রোগী দেখতে যেতে হতো। এখন মোটর সাইকেলে চড়ে তিনি ক্লিনিকগুলোতে যান। ৭০ বছর বয়সেও তিনি গ্রামে যান রোগী দেখতে। বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েদের।

১৯৮৬ সালে একবার অসুস্থ মাকে দেখতে ব্রিটেনে যান।

১৯৯৬ সালে আবার বল্লভপুর ফিরে আসেন। বাংলাদেশ ছেড়ে ব্রিটেনে থাকতে মন টানেনি তার। হাসপাতাল ও সাব সেন্টারগুলো দেখাশুনার দায়িত্বও পালন করে চলেছেন। বল্লভপুর হাসপাতাল ৫০ বেডের হাসপাতালে উন্নীত করেছেন। এখানে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের জন্য নির্ধারিত ১২টি বেড আছে। একেবারে অসহায় বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। ইনডোর চিকিৎসার পাশাপাশি আউটডোর চিকিৎসার ব্যবস্থাও আছে এখানে। এ হাসাপাতালে আছে একটি নার্সিং ট্রেনিং সেন্টার। প্রতি ব্যাচে ৩০ জনকে ট্রেনিং দেওয়া হয় বলে তিনি জানান। সিস্টার জিলিয়ান রোজ ২০০০ সালে মানব সেবার জন্য ‘অনার অব ব্রিটিশ এম্পায়ার’ পদক পান। কিন্তু হাসপাতাল ফেলে রেখে ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনার অফিসে গিয়ে পদক আনতে যাননি। তখন বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার বল্লভপুর গিয়ে সম্মান সূচক পদকটি সিস্টার জিলিয়ান রোজের হাতে তুলে দেন। তিনি বিয়েও করেননি। বাংলাদেশের মানুষকে ভাল বেসেছেন। তাই এদেশ ছেড়ে যেতে মন চায় না বলে জানালেন।
০ বিমল সাহা, ভ্রাম্যমাণ সংবাদদাতা

2 comments:

Post a Comment