Saturday, September 11, 2010

কৌমার্যবৃত্তি বা আজীবন অবিবাহিত থাকার সংস্কার কতটুকু বিজ্ঞানসম্মত

0 comments
লিখেছেন আবু শুয়াইব
কৌমার্যবৃত্তি - আজীবন অবিবাহিত থাকার সংস্কার - ইসলামপূর্ব সকল ধর্মে সর্বোচ্চ উৎকর্ষপ্রাপ্তির মাধ্যম হিসেবে উল্লিখিত-প্রশংসিত হয়েছে। নারীর প্রতি লোকজ-মিথ-আশ্রিত দৃষ্টির কারণেই কৌমার্যবৃত্তি স্তুতি পেয়েছে সকল ধর্মে। নারী নিকৃষ্ট, সকল পাপ-অনিষ্টের মূল - এধারণা থেকেই নারীর সংস্পর্শে আসা পুরুষ, সমাজে খ্যাত হয়েছে অধস্তত পর্যায়ের জীব হিসেবে। যে ব্যক্তি, এর উলটো পাপিয়সী নারীর বাহুলগ্নতায় নিজেকে আনেনি কখনো সে পরিণত হয়েছে ইর্ষণীয় পবিত্র-উৎকর্ষিত ব্যক্তি হিসেবে। এনসাইকোপেডিয় ব্রিটানিকার ভাষায়-
Celibacy has existed in some form or another though out man’s religious history and has appeared in virtually all the major religious tradition of the world (৩/১০৪০)
কৌমার্যবৃত্তি মানবজাতির ধর্মব্রাত্যের ইতিহাসের বিস্তৃতিতে অস্তিত্ববান থেকেছে কোনো-না-কোনো আকৃতিতে। বিশ্বের সেরা ধর্মগুলোর আচারেই তা প্রকাশ পেয়েছে প্রায়োগিকভাবে।
এনসাইকোপেডিয় ব্রিটানিকায় Celibacy শিরোনামের অধীনে দেখানো হয়েছে কীভাবে কৌমার্যাবদ প্রভাবিত করেছে সকল ধর্মকে।
কৌমার্য-প্রথার মূল উদ্দেশ্য ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের চারপাশে নির্মাণ করা পবিত্রতার মহমান্বিত প্রাচীর। ধর্মীয় ব্যক্তিত্বকে হতে হবে স্বয়ংসম্পূর্ণ আধ্যাত্মিকভাবে। সে যদি আরোপিত হয় নারীতে তাবে তা হবে পরমুখাপেক্ষিতার আলামত। নারীর সাথে দাম্পত্যসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা প্রাচীন ধর্মগুলোয় নিষেধ ছিল। কেননা তাদের ধারণা মতে কৌমার্যবৃত্তির বলয় ব্যতীত আধ্যাত্মের বিশুদ্ধতম অনুশীলন সম্ভব নয়। পরবর্তীতে ধর্মাশ্রিত যে সাহিত্য সৃষ্টি হয়েছে তাতে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে কৌমার্যবৃত্তি প্রবল প্রতাপে আধ্যাত্মে-চরিত্রে উৎকর্ষ সাধনের পথ হিসেবে। তাই উচিত, যারা আধ্যাত্মে-চরিত্রে ছুঁতে চায় শীর্ষবিন্দু তাদের, বিয়ে না করে কৌমার্যবৃত্তির কঠিন শাসনে নিজেদেরকে সঁপে দেয়া। আর যদি পূর্ববিবাহিত হয়ে থাকে তাহলে তাকে বিরত থাকতে হবে সকলপ্রকার যৌনসংস্পর্শ থেকে। যৌনক্রিয়া ধর্মের সবচেয়ে বড় শত্রু বলে খ্যাতী পেয়েছে। নারীর ক্ষেত্রেও সর্বোচ্চ আধ্যাত্মিক রূপ হিসেবে স্তুতি পেয়েছে কুমারী থেকে জীবন কাটিয়ে দেয়া। প্রাচীন রোমান ধর্মের দার্শনিক ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্ববর্গের পবিত্রতম প্রতিচ্ছবি এটা ছিল যে তারা চিরকুমার থেকেই পুরোজীবন কাটিয়ে দেবেন। মনে করা হত এধরনের মানুষই আদর্শ আধ্যাত্মিক শিক্ষক হতে পারেন। জৈনধর্মে নারীকে চেয়ে দেখা থেকেও বিরত থাকার নির্দেশ রয়েছে। কৌমার্যবাদের এই অনুশীলন বৌদ্ধ ও অন্যান্য ধর্মেও সমানভাবে পাওয়া যায়। ( দ্রঃ এনসাইক্লোপেডিয় ব্রিটানিকা (১৯৮৪) খন্ড ১৬, পৃষ্ঠা ৫৯৯)
ইসলামের নবী মুহাম্মদ (স) মানবতিহাসের দীর্ঘ পরম্পরায় একমাত্র ব্যক্তিত্ব নারীর অস্পৃশ্যতার, পাপসর্বস্ব হওয়ার আদিম ধারণার বিপক্ষে যিনি গ্রহণ করেছেন দ্রোহী অবস্থান। নয় কৌমার্যবৃত্তি যা পবিত্রতার শিখরে ওঠাতে পারে কোনো ব্যক্তিকে, বরং স্ত্রী-সন্তানের মাঝে জীবনযাপন করে যে ব্যক্তি কঠিনভাবে নিজেকে ধরে রাখতে পারে স্রষ্টার সীমানায় সেই হল উত্তম-পবিত্র পুরুষ। এধারণাই প্রতিষ্ঠিত করেছেন রাসূলুল্লাহ (স) তাঁর কথা ও কর্মের মাধ্যমে। তিনি যে কেবল নিজেই বিয়ে করে নারীর সংস্পর্শে গিয়েছেন তা নয়, সাথীদেরকেও এব্যাপারে তাগিদ-উৎসাহ দিয়েছেন উদ্দীপক ভাষায়। নারীর সংলগ্নতা সম্পর্কে আদিম ধ্যান-ধারণ-কল্পনা ধসিয়ে দেয়ার উদ্দেশে তিনি দ্ব্যর্থহীনভাষায় স্পষ্ট-উচ্চারণে বলেছেন ((حبب إلي النساء' নারীকে আমার জন্য করা হয়েছে প্রেমময়'। আদিম প্রথাগত ধারায় নারীর সংলগ্নতা এতোই নিকৃষ্ট মনে করা হতো যে এভাবে বিপরীত প্রান্তিকতায় অবস্থান নিয়ে কথা না বললে এবিষয়ে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা অসম্ভব ছিল বললে ভুল বলা হবে না।
আধুনিক যুগের বস্তুনিষ্ঠ গবেষণার নিরিক্ষিত ফলালের কন্ঠেও উচ্চারিত হয়েছে প্রতিবাদের সুর কৌমার্যবৃত্তির বিরুদ্ধে। ইসলামের অবস্থানই মানবপ্রকৃতির প্রকরণ-উপকরণের প্রেক্ষাপটে বাস্তবসিদ্ধ, বিজ্ঞানময়। বৈজ্ঞানিক সাধনা-নিরীক্ষার অভিধানে স্বর্ণাক্ষরে খচিত হয়েছে যে সত্য-তত্ত্ব প্রবল প্রতাপে তাহল মানুষের যৌন-প্রত্যাঙ্গ , নয় কেবল যৌনক্রিয়া চরিতার্থের এক শরীরী অংশ, এর ভূমিকা বরং বিস্তৃত আরো বহু বিভিন্ন জীবনসংলগ্ন ক্ষেত্রে। মানুষের আঙ্গিক,বুদ্ধিবৃত্তিক, আত্মিক কার্যক্রম প্রখরতা দেয় যৌনপ্রত্যাঙ্গের কর্মময়তা। কোনো নপুংষুক, এ-কারণেই, হতে পারে নি কোনো বড় দার্শনিক অথবা বৈজ্ঞানিক। এমনকী হতে পারেনি এ-ধরনের ব্যক্তি বড় কোনো অপরাধীও। যৌনপ্রত্যাঙ্গের ভূমিকা মনুষ্যকর্মতৎপরতার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ কেত্রে Dr. Alexis Carrel এর বক্তব্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য- The sexual glands have other functions than that of impelling man to the gesture which, in primitive life, perpetuated the race. They also intensify all physiological, mental, and spiritual activities. No eunuch has ever become a great philosopher, a great scientist, or even a great criminal. Testicles and ovaries possess functions of overwhelming ( Man , The Unknown, 1948. p.91)
অতীতে ধর্মনিমগ্ন জীবনের আওতায় দোষের ব্যাপার মনে করা হতো নারীপুরুষের বৈবাহিক বাহুলগ্নতা। ইসলাম, এর বিপরীতে পছন্দের বিষয় হিসেবে গণ্য করেছে নারীর সাথে বৈবাহিক সংস্পর্শতা। আধুনিক বিজ্ঞানের বস্তুনিষ্ঠ গবেষণার অকাট ফলাফল প্রমাণ করেছে যে আদিম ধারণা ছিল প্রকৃতিবিরুদ্ধ। পক্ষান্তরে, এক্ষেত্রে, ইসলামের ধারণাই হল প্রকৃতি-সমর্থিত।
সে-হিসেবে শেষনবী হযরত মুহাম্মদ (স) এর বিবাহ করে সংসার পাতা ছিল শতভাগ বিজ্ঞানসম্মত, প্রকৃতির দাবিতে বিশুদ্ধ একটি পদক্ষেপ।
রাসূলুল্লাহ (স) যৌবনের উষালগ্নেই প্রবেশ করেছেন দাম্পত্যজীবনে। নারীকে করেছেন সংগী। নবুওত প্রাপ্তির পরও যাপন করেছেন ভরপুর বৈবাহিক জীবন, এবং প্রমাণ করে দেখিয়ে দিয়েছেন, নয় নারী কোনো অষ্পৃশ্যপ্রাণী যার সাহচর্য কলঙ্কিত করে পূর্ণতাপ্রাপ্তির পথ। তিনি সংসার পেতেছেন, সন্তানের পিতা হয়েছেন এবং প্রবলভাবে প্রমান করেছেন পার্থিব ও আধ্যাত্মিক উভয় ক্ষেত্রের সর্বোচ্ছ শ্রেষ্ঠত্ব।

0 comments:

Post a Comment