Saturday, September 25, 2010

কালাবার

0 comments
নাইজেরিয়ার বড় বড় শহরে পাহাড় সমান বিষাক্ত আবর্জনার স্তূপ। আগুন জ্বালিয়ে পোড়ানো হয় বর্জ্য। চারদিকে বন্ধ ড্রেন। তবে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ঝকঝকে তকতকে বন্দরনগরী কালাবারের দৃশ্যটা কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন। নাইজেরিয়ার মধ্যেই যেন অন্য এক দেশ। অন্যান্য শহরগুলো দেখে এ শহরে এলে রীতিমতো হতবাক হতে হবে। ধারণাই আসবে না যে, এটি নাইজেরিয়ার একটি শহর। ক্রস নদীর তীরবর্তী এ শহরের নাম কালাবার। এখানকার মুক্ত বায়ুতে ভেসে আসে নানা ধরনের খাবারের সুবাস, ভাজা মাছের লোভনীয় গন্ধ। রাস্তাঘাট, ফুটপাত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। কোথাও গর্ত বা খাদ নজরে পড়ে না। তাই কালাবারের বাসিন্দারা যথার্থই সগৌরবে নিজেদের শহরের নাম দিয়েছে মানুষের স্বর্গ। এই শহরের সংস্কৃতির মধ্যেই জড়িয়ে রয়েছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা। এক্ষেত্রে অর্থ নয়, মানুষের বোধশক্তিটাই আসল। এ শহরের রাস্তায় বা যেখানে-সেখানে কেউ ময়লা ফেলে না। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা যেন অনেকটা ঈশ্বরকে কাছে পাওয়ার মতো। তাই শুধু সরকার নয়, এ শহরের সব নাগরিকই এ ব্যাপারে খুবই সচেতন।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাটা নির্ভর করে মানুষের সঙ্গে পরিবেশের সম্পর্কের ওপর। কালাবারের মানুষ এফিক সম্প্রদায়ভুক্ত। এই গোত্রের লোকজন পরিষ্কার থাকতে ভালোবাসে এবং এজন্য যেকোনো ধরনের কাজ করতেও দ্বিধাবোধ করে না। গর্বের সঙ্গে গাড়ির নেমপ্লেট দেখান তারা_ যেখানে লেখা রয়েছে মানুষের স্বর্গ। তবে এই উপাধিটা টিকিয়ে রাখতে এতটুকু বসে থাকে না এখানকার বাসিন্দারা।

নগর উন্নয়ন দফতর মুখপাত্র এলিগেন্স এডিন এই প্রসঙ্গে বলেন, শহরের পরিচ্ছন্নতার দায়িত্বটা আমাদের। আমরা নিজ হাতে আবর্জনা পরিষ্কার করি, রাস্তাঘাট ঝড়ু দেই, গাছপালার পরিচর্যা করি। আবর্জনা নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলি। শহরের বিভিন্ন স্থানে ঘাস কেটে ছোট করি।

শহরটির পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে প্রায় ৯০ হাজার ইউরোর মতো খরচ হয় প্রতি মাসে। তবে অন্যান্য বড় শহরের মতো কালাবারেও বর্জ্য ফেলার জন্য সুষ্ঠু ব্যবস্থার অভাব রয়েছে। এলিগেন্স বলেন, শহরের কেন্দ্র থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে আবর্জনা ফেলার একটি ভাগার রয়েছে আমাদের। নিত্যদিনের আবর্জনা জমিয়ে ফেলা হয় সেখানে। তবে সরকার সম্প্রতি বর্জ্য ফেলার জন্য আধুনিক ব্যবস্থার উদ্যোগ নিয়েছে।

আগে কালাবার কিন্তু এতটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ছিল না। এটোপ ওবোট জানান, ১৯৯৯ সালে নতুন সরকার আসার পর থেকেই কালাবারের চেহারাটা বদলেছে। তার আগে শহরটা আজকের মতো পরিষ্কার ছিল না। ১৯৯৯ সালে সামরিক শাসনের অবসানের পর চালু হয় বহুদলীয় গণতান্ত্রিক পদ্ধতির শাসন ব্যবস্থা। নতুন সরকার দুর্নীতি দমন থেকে শুরু করে নানা ধরনের উন্নয়ন কর্মসূচি হাতে নেয়। কালাবার শহরেও অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন শুরু হয়। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রে আইন কানুন তৈরি হয়। এলিগেন্স এডিন বলেন, আমাদের রয়েছে কঠোর পরিবেশ আইন। কেউ যদি ইচ্ছা করে রাস্তায় ময়লা ফেলে, তা হলে তার কারাদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে। আমাদের আবর্জনা আইনটা বলা যায় খুবই পরিবেশবান্ধব। তা সত্ত্বেও কালাবারকে পুলিশের নগরী বলা যায় না। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে এখানকার বাসিন্দারাই পরস্পরকে সচেতন করে দেয়। কেউ যদি রাস্তায় আবর্জনা নিক্ষেপ করে তাহলে তাকে ভদ্রভাবে তা সরিয়ে ফেলতে বলা হয়। ফলে এই শহরটা শুধু যে দেখতেই পরিষ্কার তা নয়, এখানকার লোকজনের অসুখ-বিসুখও হয় কম। নাইজেরিয়ার অন্যান্য শহরে যেখানে মাঝে মাঝেই কলেরা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, সেখানে বেশ কয়েক বছর ধরে কালাবারের মানুষ এ রোগটির কবল থেকে মুক্ত।

আনোয়ার হোসেন

0 comments:

Post a Comment