এ পৃথিবীজুড়ে দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যের কোন অভাব নেই। এসব স্থাপত্যের অধিকাংশই পুরনো দিনের। আবার আধুনিক যুগেরও অনেক স্থাপত্য রয়েছে। আগের দিনের রাজা-বাদশাহদের আবাসস্থল মানেই ছিল বিশাল রাজপ্রাসাদ_ এই যুগের প্রধানমন্ত্রী-রাষ্ট্রপতিরাও বসবাস করেন দৃষ্টিনন্দন আলিশান বাড়িতে। এমনই এক বিখ্যাত প্রাসাদ হচ্ছে ফ্রান্সের এলিসি প্রাসাদ। এটি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন। যেখানে প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্টলেডি বসবাস করা ছাড়াও মন্ত্রীরা মাসিক কিংবা সাপ্তাহিক আলোচনায় একত্রিত হন। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস শহরে বিখ্যাত এই প্রাসাদটি অবস্থিত। আরমেন্ড-ক্লাউড নামক এক বিখ্যাত স্থপতির স্বপ্ন ছিল ফ্রান্সের রাজা-রানির জন্য একটি প্রাসাদ তৈরি করার। স্বপ্ন অনুযায়ী ১৭১৮ সালে নিজের যা কিছু ছিল তা বিক্রি করে দিয়ে শহর থেকে একটু দূরে নিজ গ্রামের পাশে কয়েকশ' কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করেন সুবিশাল প্রাসাদ। কিন্তু ক্লাউডের স্বপ্ন ভঙ্গ হলো তখনই যখন রাজা-রানি দুইজনই প্রাসাদে বসবাস করার অসম্মতি জানান। মনের কষ্ট চাপা রেখে ক্লাউড প্রাসাদের পরিবর্তে আবাসিক হোটেল হিসেবে ভবনটি নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। ১৭৫৩ সাল পর্যন্ত এলিসি প্রাসাদ আবাসিক হোটেল হিসেবেই স্বীকৃতি ছিল। নেপোলিয়ন বোনাপার্টের সময়ই সর্বপ্রথম প্রাসাদটিতে অফিসিয়াল দফতর হিসেবে কার্যক্রম শুরু হয়। ১৮১৬ সালে দ্বিতীয় গণতান্ত্রিক সরকার ভবনটির নামকরণ করে Elysce Palace বা স্বর্গীয় প্রাসাদ।
১৯৫১ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত ৫ম গণতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট চার্লস গেইল এটাকে নিজের ব্যক্তিগত ভবন হিসেবে ব্যবহার করেন। ১৯৯৫ সাল থেকে বর্তমান অবধি প্রাসাদটি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। প্রাসাদটির আশপাশে রয়েছে মনোমুঙ্কর ফুল ও বিভিন্ন ফলের বাগান, প্রায় ৫০০ প্রহরী, ভিতরে রয়েছে অসংখ্য কক্ষ ও অতিথিশালা। ১০০ জন কর্মচারী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজে নিয়োজিত। ফ্রান্সের বর্তমান প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজি ও ফার্স্টলেডি কার্লরুনি প্রাসাদটিতে বসবাস করেন। প্রাসাদটি ৩০০ বছরের পুরনো হলেও ফ্রান্সবাসীর কাছে এটি চিরসবুজ ও অবিনশ্বর হিসেবে বিবেচিত।
-রিয়াজুল ইসলাম
0 comments:
Post a Comment