Saturday, September 18, 2010

উল্কি কাহিনী

0 comments
থাইল্যান্ডে বৌদ্ধ মন্দিরগুলোতে নানাপ্রকার নানা পেশার মানুষের দেখা মেলে। শিক্ষক, জেলে, ডাক্তার সবাই মন্দিরে যায় প্রার্থনা করতে, মনের বাসনা পূরণ করার আকাক্সক্ষায়। তবে ব্যাংকক থেকে এক ঘণ্টার গাড়ি ড্রাইভিংয়ের দূরত্বে ওয়াট ব্যাংফ্রা নামে যে এলাকাটি আছে, ওখানকার মন্দিরে আগমন ঘটে শুধু গুণ্ডা-বদমাশদের। হিটম্যান, গ্যাংমেম্বার, জুয়াড়ি, ডাকাত, অন্ধকার জগতের এসব লোকের প্রিয় তীর্থস্থান ওয়াট ব্যাংফ্রার মন্দির। স্থানীয় ভাষায় গুণ্ডা-বদমাশদের বলা হয় নাক লেং। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারিতে গোটা থাইল্যান্ড থেকে হাজার হাজার নাক লেং এসে হাজির হয়ে যায় এই মন্দিরে। সবার মনে আশা তারা জাদুর সাহায্যে তাদের অপরিমেয় শক্তিদান করতে পারেন। অনেকের ধারনা, শরীরে জাদুর উল্কি থাকলে ডাকাতের বন্দুকের গুলিও দাঁত দিয়ে থামিয়ে দেওয়া যায়। সোমাচাই নামে এক প্রাক্তন সৈনিক বলেছেন, একবার সে কম্বোডিয়ার সীমান্তে একটি স্থল মাইনে পা দিয়ে বসে। মাইন বিস্ফোরিত হলেও তার কোনো ক্ষতি হয়নি। শ্রাপনেল তার উল্কি আঁকা পায়ে বিঁধতে পারেনি। এ ঘটনার পরে জাদুর উল্কির প্রতি ভক্তি আরো বেড়ে গেছে সোমাচাই'র। সে আবার আসে আরো উল্কি এঁকে নিতে।

মন্ত্র পড়তে পড়তে রুপার শলা দিয়ে সন্যাসী কারো পিঠে, পেটে কিংবা বুকে উল্কি আঁকেন। অন্য সন্ন্যাসীরা উল্কিতে প্রাণী বা ধর্মীয় সংকেতের ছবি আঁকলেও লুরাং ফি পাও সবসময় বুদ্ধের বাণী প্রচার করেন উল্কির মাধ্যমে। এরপর শুরু হয় আসল মজা। অন্ধ বিশ্বাসীদের ধারণা, শরীরের উল্কি দৈত্য-দানবদের জাগিয়ে তোলে। আর নিয়েট, যে মানুষ হত্যার দায়ে জেল খেটেছে, তার ভেতরেও যেন জেগে উঠে ঘুমন্ত দানব।

তার পিঠ বেয়ে রক্ত এবং কালি ঝরছে। আর নিয়েট চার হাত পায়ে উবু হয়ে মন্দিরের বাইরে বেদিতে লাফ ঝাঁপ দিতে থাকে। গোঁ গোঁ করতে করতে নিয়েট ছুটে যায় অস্থায়ীভাবে তৈরি বেদির ওপর স্ত্রোত্র গানে ব্যস্ত সন্ন্যাসীদের দিকে। তবে সন্ন্যাসীদের হামলা চালানোর সুযোগ পায় না নিয়েট। তার আগেই তাকে ধরে ফেলে দেয় মাটিতে। একজন হাত দিয়ে তার কানের লতি ঘষতে থাকে। এতে নাকি নিয়েটের ওপর ভর করা দানব চলে যাবে।

উল্কি আঁকার এই অনুষ্ঠানটিতে প্রচুর সময় দিতে হয়, শারীরিক কষ্ট তো আছেই। তবুও নিয়েটের মতো মানুষ এখানে আগ্রহ নিয়ে চলে আসে। কয়েক বছর আগে নিয়েট তার বুকে বাঘের উল্কি এঁকেছিল। এর কিছু দিন পর এক লোক তাকে লক্ষ্য করে বন্দুক ছুঁড়েছিল। কিন্তু বন্দুক থেকে গুলি বের হয়নি। নিয়েটের বিশ্বাস, তার বুকের বাঘের উল্কিই বন্দুক থেকে গুলি বের হতে দেয়নি।



প্রীতম সাহা সুদীপ

0 comments:

Post a Comment