Monday, September 13, 2010

সুতি পোশাক

0 comments
জনপ্রিয়তার নিরিখে খাদি, জামদানি, এন্ডি, আদি নানা পরিচয়ে নিজের জাতীয়তা ঘোষণা করলেও আরাম ও স্বস্তিতে সুতি বাজার দখল করেছে একচেটিয়াভাবে। বছরজুড়ে জনপ্রিয় পোশাক উপকরণ হিসেবে সুতি তাই সবার কাছেই গ্রহণযোগ্য। তাই নিয়ে লিখেছেন মোর্শেদ নাসের টিটু

প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে তার যাত্রা শুরু হয়েছিল। আমেরিকা মহাদেশেই প্রথম জš§ হলেও তার ব্যবহার ছড়িয়ে গেছে ইউরোপ আর এশিয়ার প্রতিটি প্রান্তরে। পেরু এবং ম্যাক্সিকো তার আদি জš§স্থান। তিন হাজার বছর আগে থেকে সভ্যতার দুই ভিন্ন পীঠস্থান চীন ও মিশরে এর বিস্তৃতি। তারও কিছুকাল পরে ভারতীয় উপমহাদেশ জুড়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই আবরণ। আরব বণিকদের হাতধরে দু’হাজার বছর আগে ইউরোপের বাজারে নিজের অস্তিত্ব ঘোষণা করে সে। আমাদের কাছে সে ‘সুতি’ নামেই পরিচিত।

আরাম কিংবা স্বস্তির জন্য আমরা যে জলবায়ু দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হই সেই অঞ্চলে সবচেয়ে জনপ্রিয় যে কাপড়ের ধরন তার নাম ‘সুতি’। মূলত কার্পাস তুলা থেকে এই কাপড়ের আবিষ্কার। প্রথম দিকে তুলার দানা সুতি কাপড়ের জন্য অস্বস্তিকর থাকলেও ১৭৯৩ সালে ইলি হুর্ডটোনি আবিষ্কার করেন দানামুক্ত সুতি। পরবর্তীতে ১৮ শতকের শুরুতে মেশিনের মাধ্যমে সুতি কাপড় বোনা শুরু হয়। মনে রাখতে হবে প্রথম বুননে যেভাবে শুরু হয়েছিল, তাতে প্রাকৃতিক কাপড় হিসেবেই সুতির ব্যবহার ছিল প্রবল। ছেলেদের এবং মেয়েদের কাপড় উভয়ক্ষেত্রেই সুতি তার জনপ্রিয়তা ছড়িয়েছে সমানভাবে। ঋতুভেদে এর ব্যবহারের ব্যাপকতা কমবেশি হলেও জনপ্রিয়তায় যে কোন কাপড়ের চেয়ে সুতি এগিয়ে আছে গণতান্ত্রিক পন্থায়। এই কাপড়ের ভাঁজ যেমন থাকে সুন্দর, তেমনি পরেও আরাম। পাশাপাশি শরীরের বাড়তি আর্দ্রতা দ্রুত শুষে নেয় এ কাপড়টি। ত্বকের জন্যও সুতি কাপড় সবার কাছে পছন্দনীয়। পোশাকের ভেতরে যে আরাম লুকিয়ে থাকে তার একটি বড় অংশ নিশ্চিত করতে পারে সুতি কাপড়। আমাদের দেশে ছেলেদের শার্ট, ফতুয়া আর পাঞ্জাবিতে এই কাপড়ের ব্যবহার যেমন প্রবল, তেমনি মেয়েদের ক্ষেত্রে সালোয়ার কামিজ ও শাড়িতেও সুতি তার জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে ব্যাপকভাবে। সুতির দু’টি ধরন হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে আছে এন্ডি কটন ও জামদানি বুনন। যেমনটি বললেন ফ্যাশন হাউজ অঞ্জন’স-এর ডিজাইনার শাহীন আহমেদ। তার মতে, সুতি শাড়ি নিয়মিত যেমন ব্যবহার করা যায়, তেমনি আভিজাত্য প্রকাশেও তা অনেক সময় ভিন্নতা তৈরি করে। আমাদের দেশীয় জামদানি শাড়ি সুতি শাড়ির ঐতিহ্যকে প্রবলভাবে যেমন তুলে ধরে, তেমনি নকশা’র বুননে ভিন্নতাও নিশ্চিত করে। রূপ বিশেষজ্ঞ কানিজ আলমাসের মতে, নিজের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলার ক্ষেত্রে সুতির পোশাক যে নান্দনিক আরামের ছোঁয়া দেয়, তা ভেতরের সৌন্দর্যকে প্রকাশ করতে সাহায্য করে। তাই সুতির পোশাক পরে আমরা অনেক বেশি সাবলীল ও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।

শুধু পোশাকের স্বাচ্ছন্দ্যেই নয় বরং রঙের উজ্জ্বলতা নির্ধারণেও সুতি আমাদের সাহায্য করে ব্যাপকভাবে। কাটিংয়ে ভিন্নতা আনতে সুতি কাপড় পোশাকের উপকরণ হিসেবে অনেক বেশি ইতিবাচক দিক ধারণ করে। সুতির এতোসব ইতিবাচক দিক ভুলে গিয়ে নিশ্চয়ই কোন ফ্যাশন সচেতন মানুষের মনে অন্যকোনো কাপড়ের ধরণ আলোড়ন তুলতে পারে না। তাই সূর্যদেবকে উপসনা দিতে আর আরামের বরপুত্র খুঁজতে প্রতিনিয়ত আমরা সুতি কাপড়কেই প্রাধান্য দিই। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের তাঁতশিল্পও নীরব সমর্থন পেয়ে যায় এই জনপ্রিয়তার ধারায়।

0 comments:

Post a Comment