Monday, September 27, 2010

বাংলা একাডেমী

0 comments
বর্তমান রমনা এলাকায় তৎকালীন ইংরেজ সরকারের এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের জন্য নির্মিত হয়েছিল তিনটি বিশাল অট্টালিকা। তার একটি ছিল বর্ধমান হাউজ। যা এখন বাংলা একাডেমী। ১৯৫৫ সালের ৩রা ডিসেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন তথা বর্ধমান হাউজে বাংলা একাডেমীর যাত্রা শুরু হয়। পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশে বাংলা সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষা হলেও তা ছিল সব সময় উপেক্ষিত। এ অঞ্চলের মানুষ ছিল জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিক্ষা দীক্ষায় অনেক পিছিয়ে। ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে বাংলা ভাষাভাষী লেখক পণ্ডিতরা সোচ্চার হন এ ভাষার মান রক্ষায়। ১৯২৫ সালে কলকাতায় বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদে ভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ‘বাংলা ভাষার জ্ঞান সাধনা ও সাহিত্য চর্চার প্রস্তাব করেন’। ১৯৪০ সালে একে ফজলুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অল ইন্ডিয়া মুসলিম কনফারেন্সে তিনি বাংলা সরকারকে একটি অনুবাদ বিভাগ স্থাপনের অনুরোধ করেন। এভাবে বাংলাভাষা রক্ষার মৃদু দাবি ধীরে ধীরে তীব্র গণআন্দোলনে রূপ নেয়। দেশ বিভাগোত্তরকালে ১৯৪৮ সালের ৩রা ডিসেম্বর ঢাকায় পূর্ব পাকিস্তান সাহিত্য সম্মেলনে সভাপতির ভাষণে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বাংলাভাষার চর্চা ও গবেষণার জন্য একটি একাডেমী গড়ে তোলার কথা বলেন। ডিসেম্বর মাসেই বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানের সরকারি ভাষা ও শিক্ষার মাধ্যম এবং উর্দ্দুর পাশাপাশি পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৫২ সালের দিকে মুসলিম লীগের প্রাদেশিক ও পাকিস্তান সরকার এ দাবির প্রকাশ্য বিরোধিতা করলে আন্দোলনের তীব্রতা আরও বেড়ে যায়। বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা করার দাবিতে ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, কৃষক, শ্রমিক মাঠে নেমে আসে। বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারির প্রাতঃবেলা তার বুকে আঁকে তারা লাল খুনের বিজয়। ফলে বাংলাভাষার মর্যাদা ও অধিকার রক্ষায় বাংলা একাডেমী প্রতিষ্ঠার দাবি আরও জোরালো হয়। ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম বাংলা একাডেমী প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করে ব্যর্থ হয়। ১৯৫৪ সালে পূর্ব বাংলা আইন সভার নির্বাচনে বিজয়ী যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী বাংলা একাডেমী প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেয়। তবে ক্ষমতা গ্রহণের অল্পদিনের মধ্যেই যুক্তফ্রন্ট সরকারের পতন হলে সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। মধ্যবর্তী নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট সরকার দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর তৎকালীন মুখ্য মন্ত্রী আবুল হোসেন ১৯৫৫ সালের ৩রা ডিসেম্বর ঐতিহাসিক বর্ধমান হাউজে বাংলা ভাষীদের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ লাভ করে। পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক সরকার প্রথমে বাংলা একাডেমী পরিচালনায় একটি প্রিপারেটরি কমিটি গঠন করেন। ভাষাবিদ ড. মুহম্মদ এনামুল হক বাংলা একাডেমীর প্রথম পরিচালক হিসেবে ১৯৫৬ সালের ১লা ডিসেম্বর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। বাংলা একাডেমী যাত্রাকালীন ছিল একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হলে বাংলাদেশ সরকার কেন্দ্রিয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ডকে বাংলা একাডেমীর সাথে একীভূত করে। তখন একাডেমীর অনেক কাঠামোগত পরিবর্তন সাধিত হয়। একাডেমীর পরিচালকের পদমর্যাদা মহাপরিচালকে উন্নীত করা হয়। তৎকালীন পাঠ্যপুস্তক ও ফোকলোর নামে নতুন দুটি বিভাগ খোলা হয়। এ পর্যন্ত বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা প্রায় চল্লিশ হাজার। একাডেমীর নিজস্ব মুদ্রণালয় রয়েছে। মুদ্রণালয়টি সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ ও বৃহৎ। একাডেমী থেকে প্রধানত আঞ্চলিক ভাষার অভিধান প্রকাশ করা হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন ভাষার আরও কতগুলো অভিধান সঙ্কলন করা হয়। একাডেমী নিজস্ব উদ্যোগে বিষয়ভিত্তিক পরিভাষা প্রকাশ, প্রমিত বাংলা বানানের নীতিমালা প্রণয়ন ও প্রচার করে থাকে।

বাংলা একাডেমীর সর্বোচ্চ পরিষদ হচ্ছে-সাধারণ পরিষদ। এটি ফেলো, সদস্য, জীবন সদস্যদের দ্বারা গঠিত। এ পরিষদের বার্ষিক সভায় সর্বসম্মতিক্রমে কার্যনির্বাহী পরিষদ গঠিত হয়। প্রতিবছর পুরো ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে বাংলা একাডেমী চত্বরে অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় বইমেলা। এ মেলা হাজারো বইপ্রেমীর পাশাপাশি দেশি, প্রবাসী, নবীন-প্রবীণ লেখকদের মিলনমেলায় পরিণত হয়। এ সময় সাহিত্যে অসামান্য কীর্তির জন্য প্রদান করা হয় দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহিত্য অ্যাওয়ার্ড ‘বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার’।
০০ আল মেহেদী ০০

0 comments:

Post a Comment