Monday, September 6, 2010

সুয়েজ খাল

0 comments
ভূমধ্যসাগরকে রেড সি (Redsea) অর্থাৎ লোহিত সাগরের সঙ্গে একটি খালের সাহায্যে যুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা বহু শতাব্দী ধরেই অনুভূত হচ্ছিল। অনেকের বিশ্বাস ফ্যারাও (Pharaohs)-দের সময়কালে প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ সালে প্রথম প্রচেষ্টা হয়েছিল। এরপর কয়েকটি পরিকল্পনা হয় কিন্তু যে কোনো কারণেই হোক কোনো পরিকল্পনাই ফলপ্রসূ হয়নি। যাই হোক, পশ্চিম ইউরোপ, ভারত বর্ষ এবং সুদূর প্রাচ্যের মধ্যে ব্যবসা বৃদ্ধির ফলে এ খাল খননের চিন্তা দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পায়। অনুমান করা হয় যে, এরূপ একটি খাল খনন করা হলে ব্রিটেন থেকে ভারতবর্ষ পর্যন্ত যাত্রাপথ প্রায় ৪০০০ মাইল কমে যাবে। ব্রিটেন এ কাজটি সম্পন্ন করার জন্য খুব উৎসাহী ছিল কারণ তাদের ব্যবসায় দ্রুতগতিতে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হচ্ছিল। কিন্তু ফরাসিরাই সর্বপ্রথম এ পরিকল্পনাকে কার্যকর করতে শুরু করে। সুয়েজ খাল পরিকল্পনার চূড়ান্ত রূপ দেন ফরাসি রাজদূত ফার্ডিন্যান্ড ডি লেসেপ্স (Ferdinand De Lesseps)। এ কাজের দায়িত্ব তার হাতে দেওয়ার জন্য তিনি ইজিপ্ট (Egypt) অর্থাৎ মিসরের সরকারকে রাজি করান। তিনি ইউরোপীয় দেশগুলো থেকে অর্থ সংগ্রহ করেন। এ খাল নির্মাণের জন্য তিনি অনেকের কাছ থেকে অনেক পরিকল্পনা পান কিন্তু একজন ইতালীয় ইঞ্জিনিয়ার, লুইগি নেগ্রেলির পরিকল্পনাটি তিনি কার্যকর করার জন্য নির্বাচন করেন। সুয়েজ খালের নির্মাণকাজ ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে ২৫ এপ্রিল শুরু হয়। উনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে খালটির উদ্বোধন করা হয়। ১৮৭৫ সালে মহারানী ভিক্টোরিয়া কর্তৃক ফার্ডিন্যান্ড ডি লেসেপ্স সম্মানিত হন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডিজর‌্যালী কোম্পানির সব শেয়ার ক্রয় করেন। আর এভাবেই সুয়েজ ক্যানেল কোম্পানিতে ব্রিটেন সর্বাধিক শেয়ারের মালিক হন। এ কোম্পানিকে ৯৯ বছর সময়কাল এ খালের কাজ পরিচালনা করার অধিকার দেওয়া হয়। ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে কর্নেল নাসেরের নেতৃত্বাধীন মিসরের সরকার এ খালকে রাষ্ট্রায়ত্ত করেন। তিনি জানান, এ খাল যে দেশের ভিতর দিয়ে যাচ্ছে সে দেশই এখন এ খালের মালিক বা সে দেশই কাজ পরিচালনা করছে। ব্রিটিশ ও ফরাসিদের কাছে এটা গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হয়নি এবং এ বছরই তারা খালের আন্তর্জাতিক রূপ পুনঃস্থাপনের জন্য সামরিক ব্যবস্থা অবলম্বন করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা নাসেরের ঘোষণা গ্রহণ করতে বাধ্য হয়। এ খালটি নির্মাণে প্রায় ১০ বছর সময় লেগেছিল। ২৫,০০০ মিসরীয় এবং ১,০০০ ইউরোপীয় এ বিশাল প্রজেক্টে কাজ করে। ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দের ১৭ নভেম্বর খালের উদ্বোধনকালে ২০টি জাহাজ পোর্ট সৈয়দ বন্দর ত্যাগ করে খালের ভিতর আসে। সুয়েজ খালটি ১০৭ মাইল লম্বা। জলের উপরিভাগে এর প্রস্থ ২৩৫ ফুট থেকে ৪২১ ফুট। জলের তলদেশে এর প্রস্থ ১৫১ ফুট থেকে ৩৩৭ ফুট। জলের গভীরতা ৩৭ ফুট থেকে ৪২ ফুট। যেসব জাহাজের ৩৫ ফুটের কম জল দরকার কেবলমাত্র সেসব জাহাজকে খালের ভিতর ঢুকতে দেওয়া হয়। এ খাল ইউরোপ, ভারতবর্ষ এবং পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে যাতায়াতের পথ প্রদান করে। বর্তমানে সুয়েজ খাল পৃথিবীর একটি বৃহৎ সমুদ্র পথ। আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধের কারণে ১৯৬৭ সালের জুন মাস থেকে ১৯৭৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত সুয়েজ খালের ভিতর দিয়ে যাতায়াত বন্ধ ছিল।
FileServe
Free Website Hosting
-প্রীতম সাহা সুদীপ

0 comments:

Post a Comment