Sunday, September 5, 2010

চীনামাটি

0 comments
চীনামাটি হচ্ছে একপ্রকার নরম সাদা রংয়ের মাটি যা চীনারা মৃৎপাত্র তৈরি করতে সর্বপ্রথম ব্যবহার করত। ক্যাও-লিং (kao-ling) নামক এক টিলা পাহাড় থেকে এ মাটি সংগ্রহ করা হতো বলে একে ক্যাওলিন বলা হয়। এ মাটি শতকরা ৪৬ ভাগ বালি (silica), ৪০ ভাগ এলুমিনা (Aluminium-oxide) এবং ১৪ ভাগ জল। চীনামাটির একটি বিশেষ ধর্ম আছে। আর উক্ত ধর্মের কারণেই কাপ, প্লেট, চা-পাত্র ইত্যাদি তৈরিতে এ মাটি ব্যবহৃত হয়। চীনামাটির বিশেষ ধর্মটি হচ্ছে আগুনে উচ্চ তাপে যখন এ মাটি উত্তপ্ত করা হয় তখন এটি সাদা, শক্ত, মসৃণ ও চকচকে হয়ে পড়ে। ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, পূর্ব-জার্মানি ও দক্ষিণ আমেরিকায় খনি থেকে প্রচুর পরিমাণে চীনামাটি উত্তোলিত হয়। চীনামাটির পলি-তলানি (Deposit) পরিলক্ষিত হয় পশ্চিম ইংল্যান্ড, কর্নওয়াল এবং পশ্চিম ডেভনে। এসব স্থানেই বর্তমানে প্রচুর পরিমাণে মৃৎশিল্প গড়ে উঠছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের অন্ধপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিম বাংলা, দিলি্ল, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও তামিলনাড়ুর বিভিন্ন স্থানে চীনামাটি ও এর অনুরূপ মাটি দেখতে পাওয়া যায়। চীনা মাটি শুধুমাত্র মৃৎশিল্পেই ব্যবহৃত হয় না। কাগজ, রাবার, রং ও প্রসাধন সামগ্রী দ্রব্য উৎপাদনের ক্ষেত্রেও এর ব্যবহার রয়েছে। এছাড়া ওষুধ তৈরির কারখানায়ও চীনামাটি ব্যবহৃত হয়। কাগজের উপর প্রলেপ লাগানোর জন্যও এর ব্যবহার হয়ে থাকে। চীনামাটির ব্যবহারে রাবার খুব শক্ত হয়। উচ্চতাপ সহনক্ষম ধাতু গলানোর মৃৎপাত্রও তৈরি করা হয় চীনামাটি থেকে। চীনা মাটির পাত্র তৈরি করতে প্রথমে কোয়ার্টজ ও ফেলসপার (Felspar) চূর্ণ চীনামাটির সঙ্গে মিশানো হয়। তারপর জল দিয়ে এ মিশ্রণের এক মণ্ড (Pulp) তৈরি করা হয়। ওই মণ্ড থেকে তৈরি করা হয় নানা রকমের মৃৎপাত্র। পরে মৃৎপাত্রগুলোকে শুকানোর পর ১৩০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় রেখে উত্তপ্ত করা বা সেঁকা হয়। এমনি করে প্রস্তুতকৃতপাত্রগুলোকে কাচের প্রলেপ দেওয়ার পর আবার তাদের সেঁকা হয়। তারপর পাত্রগুলোতে সুন্দর সুন্দর নকশা অঙ্কন করা হয়ে থাকে। এরপর ভালোভাবে প্যাক করে বিক্রির জন্য বাজারে ছাড়া হয়। ভারতের গুজরাটের কিছু অঞ্চল যেমন-বনসকণ্ঠ, সবার কণ্ঠ এবং পাঁচমহল প্রভৃতি জায়গায় চীনামাটি পাওয়া যায়। ওইসব স্থানে প্রায় ৪.৫ মিলিয়ন (৪৫ লাখ) টন চীনামাটি আছে বলে ধারণা করা হয়।
প্রীতম সাহা সুদীপ

0 comments:

Post a Comment