আল্লামা সয়ুতি (রহঃ) ‘লুবারুন নুকুল’ গ্রন্থে উল্লেখ করিয়াছেন যে, পূর্ববর্তী নবীদের যুগে তাহাদের উম্মতগণ ছিলেন দীর্ঘজীবী। ফলে তাহারা বহু বৎসর আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগী করিয়া অশেষ সওয়াব হাসিলের সৌভাগ্য অর্জন করেন। কিন্তু পরবর্তীকালে মানুষের আয়ু কমিয়া গেলে উম্মতে মুহাম্মদীর পক্ষে এত অধিক পরিমাণ নেক আমল করা দুঃসাধ্য হইয়া পড়ে। এই কারণে সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে এক ধরনের আক্ষেপ ছিল। ইহার পরিপ্রেক্ষিতে অবতীর্ণ হয় সুরাতুল ক্বদর। ইহাতে সান্ত¡নার সুরে বলা হয়Ñ‘লাইলাতুল ক্বদরি খয়রুম মিন আলফি শাহ্র’। অর্থ: ক্বদরের রাত্রি সহস মাস হইতে উত্তম। স্বল্পায়ু হওয়া সত্ত্বেও এই রাত্রির ইবাদত-বন্দেগী দিয়া অনেক বেশি সওয়াব অর্জনের সুযোগ আজ অবারিত। একজন মুসলিমের একজীবনে অনেকবার এই রাত্রি আসিয়া হাজির হয়। তাহার যথাযথ সদ্ব্যবহার করাই বাঞ্ছনীয়। প্রকৃতপক্ষে ক্বদরের রাত্রি সুনির্ধারিত নহে। পিয়ারা নবী (সঃ) ইহাকে বিশ রমজানের পর বিজোড় রাত্রে অন্বেষণের তাকিদ দিয়াছেন। তবে ইমাম আবু হানিফাসহ অধিকাংশ বুজুর্গ ব্যক্তিগণের অভিমত ইহার অবস্থান ২৬ রমজানের দিবাগত রাত্রিতে। কুরআন-হাদীসে এই রাত্রিকে রমজানে সীমাবদ্ধ ও তারিখ অনির্দিষ্ট করিবার মধ্যে নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য কল্যাণ রহিয়াছে। যাহারা রমজানের নাজাত অংশের দশদিন ই’তিকাফের মধ্যে সময় অতিবাহিত করিতে পারেন, তাহারাই অধিক সফলকামী হইবেন বলিয়া আশা করা যায়।
লাইলাতুল কদর উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য আল্লাহ তায়া’লার এক বিশেষ নিয়ামত। এই পূণ্যময় রাত্রে ঊষার আগমন পর্যন্ত তাঁহার রহমত অবিরাম ধারায় বর্ষিত হইতে থাকে। আল্লাহর নির্দেশে হযরত জিব্রাইল (আঃ) অন্য ফিরিশতাদের সঙ্গে লইয়া সিদরাতুল মুনতাহা হইতে এই ধূলির ধরায় নামিয়া আসেন । ঈমানদার-মুত্তাকি, গুনাহগার ও মাইয়েত-মাইয়েতা সকলের জন্যই থাকে কোন না কোন সুসংবাদ। এই রাত্রির বন্দেগী কখনও বৃথা যায় না। এই সময় নফল নামাজ ও তসবীহ-তাহলিলের পাশাপাশি কুরআন তিলাওয়াতে অধিক মনোনিবেশ করা উচিত। অর্থসহ কুরআন পড়িয়া আন্তরিকভাবে উপলব্ধি করিতে পারিলে এই রাত্রে কুরআন নাজিলের সার্থকতা পরিপূর্ণ হয়। ক্বদর রাত্রির পরেই মাহে রমজানের বিদায় আসন্ন হইয়া পড়ে। তাই এই বৎসরে জিন্দেগীর সমস্ত গুণাহ-খাতা মাফ হইল কিনা তাহার জন্য দোয়া ও নামাজে বেশি বেশি কান্নাকাটি করিতে হয়। ইহাছাড়া সৎকাজ, সৎচিন্তা, সদ্ব্যবহার ও খাস নিয়তের ব্যাপারে সারা বৎসর সজাগ ও সতর্ক থাকিতে হইবে, তবেই এইসব ইবাদত অর্থবহ হইয়া উঠিবে। আল্লাহ রহমানুর রহীম আমাদের প্রার্থনা মঞ্জুর করুন এবং সারা দুনিয়ায় কল্যাণ ও শান্তি দান করুন। আমীন। সুম্মা আমীন।
0 comments:
Post a Comment